আমির পারভেজ : জাতিগত দাঙ্গা বিষয়ে তদন্ত করতে মিয়ানমার গিয়ে নিজেই বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির অনুরোধে এ উপদেষ্টা কমিশনকে নেতৃত্ব দিতে সম্মত হন কফি আনান। সু চি দাবি করেছেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সংকীর্ণ-ধর্মবোধ থেকে জন্ম নেওয়া তিক্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সমাধানের পথ দেখাবে ওই কমিশন। এ লক্ষ্যেই ৯ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে মিয়ানমার সরকার। এদের ছয়জন মিয়ানমারের এবং কফি আনানসহ বাকি তিনজন বিদেশি। সূত্র: আল-জাজিরা।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকারের গঠিত ওই ‘রাখাইন রাজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা কমিশনের’ হয়ে তিনি মিয়ানমারে গেছেন। মঙ্গলবার তিনি ওই কমিশনের প্রধান হিসেবে মিয়ানমারে পৌঁছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক তিক্ততা চলে আসছে রাখাইন বৌদ্ধ ও রাজ্যটিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে। দেশটিতে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়, এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি।
মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যের রাজধানীর সিত্তেতে পৌঁছার আগেই কফি আনান সাংবাদিকদের জানান, রাখাইনে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং পুনর্মিলনের চেষ্টা করবেন তিনি। তবে এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রাখাইনরা। সে কারণেই তাদের বিক্ষোভ আর উৎকণ্ঠা। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের রাখাইন দেশে বিদেশি প্রভাবে তদন্ত মানি না’।
দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) মিয়ানমারে সরকার গঠন করে। তবে সরকারে আসার পর তিনি রোহিঙ্গাদের দুরবস্থার বিষয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকী নির্বাচন জিততে তিনি যে মুসলমানদের প্রার্থী করেননি, সে কথাও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। সবমিলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার শিকার হন সু চি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই ‘রাখাইন রাজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা কমিশন’ গঠন করার কথা জানান তিনি।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বান কি-মুন মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আরাকান ন্যাশনাল পার্টি কফি আনানের এই সফরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কফি আনান মিয়ানমার প্ৗেছালে শত শত মানুষ বিমানবন্দরের পথের দুপাশে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে যায়, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় তিনি সেখানে মোটেই কাক্সিক্ষত নন। রাস্তার দুপাশে ব্যানার হাতে দাঁড়ানো জনগণ সেøাগান দেন, ‘কফির নেতৃত্বে কমিশন হবে না’। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি