ত্যাগ ও সম্প্রীতির ঈদ
সৈয়দ রশিদ আলম
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য পৃথিবীর সৃষ্টির পর থেকে মহাপুরুষদের কোরবানি দিতে হয়েছে। আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) জান্নাত ত্যাগ করে পৃথিবীতে যখন আসলেন, তাদের কোরবানি শুরু হয়ে গেল। এরপর হযরত নূহ (আ.) তার আপনজনকে কোরবানি দিয়ে অর্থাৎ একাকি বিশস্ত কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে, সকল সৃষ্টির একটি করে জোড়া নিয়ে নূহের কিস্তি নামে নৌকা যোগে মহাপ্লাবন পাড়ি দিলেন। হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রিয়তম পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। মহান রাব্বুল আলামিন পিতা-পুত্রের উপর সন্তুষ্টি হওয়ার পর তাদের প্রস্তুতি দেখে তাদের কোরবানি হয়ে গেছে এই বিবেচনায় তাদেরকে বরণ করে নেন।
পৃথিবীর সকল নবী-রাসূল মহাপুরুষগণ এইভাবে যুগে যুগে কোরবানি দিয়েছেন। হযরত মুসা (আ.) কে একইভাবে কোরবানি দিতে হয়েছিলে। তিনি স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানকে একাকি রেখে আলোর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তুর পাহাড়ে তিনি গিয়ে পরম করুণাময় আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। হযরত আইয়ুব (আ.) তার রাজত্ব ত্যাগ করতে হয়েছিল অর্থাৎ কোরবানি দিতে হয়েছিল। কিন্তু যুগের ফেরাউনরা, নমরুদরা কখনই কোরবানি দিতে পারেননি। কারণ প্রভু প্রেম যার অন্তরে নেই তিনি প্রভুর জন্য কোরবানি দিবেন, এটা বিধানে নেই। মহানবী রাসূলে পাক (স.) প্রিয় মক্কা নগরীকে ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল। এটাই ছিল মহানবীর একটি কোরবানি। তায়েফে গিয়ে তিনি অত্যাচারীদের অত্যাচার সহ্য করে, রক্তাক্ত হয়ে কোরবানি দিয়েছিলেন। দুই নাতি ইমাম হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.) কে কোরবানি দিতে হবে মহানবী (স.) আগে থেকেই জানতেন। মা ফাতেমা (রা.) দুই পুত্রকে কোরবানি দিতে হবে এটা জানতেন এবং মেনে নিয়েছিলেন। হযরত ওমর ফারুক (রা.), হযরত ওসমান গনি (রা.) ও হযরত আলী (রা.) কে নিজের জীবনটা কোরবানি দিতে হয়েছিল। রাসূলে পাক (স.) এর সঙ্গে জিহাদের ময়দানে অগনিত সম্মানিত সাহাবিদের জীবন দিতে হয়েছিল যা ছিল কোরবানি। তাদের কোরবানি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে গৃহিত হয়েছিল। সকল অলি আল্লাহগণ তাদের আপনজনকে, সম্পদকে কোরবানি দিয়েছেন, কিন্তু তারপরও আল্লাহর প্রতি তাদের পূর্ণ সন্তুষ্টি ছিল। মুমিন যখন খাটি মুমিনে পরিণত হয় তখন তাকে দুনিয়ার সমস্ত মোহকে কোরবানি দিতে হয়। কারও ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক্ষতি না করা, সুদ মুক্ত থাকা, ঘুষ মুক্ত থাকা, সকাল-সন্ধ্যা প্রভুর কাছে মাথানত করে থাকার নাম কোরবানি। এ ধরনের কোরবানি যারা দিতে পারেন তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোকপ্রাপ্ত হন। অলিকুল শিরোমনি মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি, মনসুর হাল্লাজ, শামসে তাবরেজকে নিজের জীবন ভোগবাধিদের কাছে কোরবানি দিতে হয়েছিল। মোমিন যখন অন্তর থেকে কোরবানি দিতে প্রস্তুতি নেন বা নিতে থাকেন, যখন কোনো পশু কোরবানি দেন তখনই সেই পশু কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অর্থাৎ শুধু পশু কোরবানি দ্বারা অন্তর কখনও পবিত্র হবে না। অন্তরের সকল নোংরামিকে হত্যা করার পর যখন একজন মানুষ কোরবানির প্রস্তুতি নেয় তখন মহান রাব্বুল আলামিন তার দ্বারা মূল কোরবানি আদায় করে নেন। দেশ ও জাতির জন্য জীবন দেওয়া, পৃথিবীর সকল মানবজাতির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে যারা কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নেন তারাই প্রকৃতি অর্থে কোরবানি দিচ্ছেন। হে রাব্বুল আলামিন আমাদেরও কোরবানির অর্থ বোঝার ও দেওয়ার যোগ্যতা দান কর।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান
তাদের স্মৃতিতে শৈশবের ঈদ
সবাই কোরবানি দিতে পারে না বলে খুব মন খারাপ হতো
অধ্যাপক আলী আশরাফ, এমপি
ছোটবেলায় ঈদের দিন পুরো এলাকায় ঘুরতাম। কে কী করছে সেগুলো দেখতাম। কে কোন কী ধরনের গরু কোরবানি দিচ্ছে, সেগুলো দেখতাম। ভালো লাগত। আনন্দ হতো। কিন্তু অনেক সময় মনও খারাপ হতো। কারণ সবাই তো কোরবানি দিতে পারত না। যারা দিত তাদের বাসায় গিয়ে মাংসের জন্য এলাকার বা অন্য এলাকার লোকজন ভিড় করত। অনেক ধাক্কাধাক্কি হতো, অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ত মাংস নিতে গিয়ে। আবার অনেকে সুন্দরভাবে লাইন করে সুশৃঙ্খলভাবে মাংস বন্টন করত। সবাই কোরবানি দিতে পারে না বলে খুব মন খারাপ হতো।
ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম, মজা করতাম। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর আর ঈদের সময় খুব একটা ভালো লাগত না। মনে হতো, বাবা থাকলে কতই না ভালো হতো। বাবাকে খুব মিস করতাম।
পরিচিতি: সাবেক ডেপুটি স্পিকার
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান
ওই ঘটনা আজও মনে পড়ে
মে. জে. আব্দুর রশীদ (অব.)
কোরবানির সকল কাজ যখন সমাপ্ত হয়ে যেত তখন মা একটি ট্রেতে মাংস সাজিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতেন, আশেপাশের প্রতিবেশিদের বাসায় গিয়ে মাংসগুলো দিয়ে আয়। তখন সবার বাসায় বাসায় গিয়ে মাংস দিয়ে আসতাম। প্রতিবেশিদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, তা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত। এই সময়ে তেমনটি দেখি না। ঢাকায় তা তো দেখি না বললেই চলে।
কোরবানির ঈদে কোরবানি শেষ হওয়ার পর গ্রামের বিভিন্ন দরিদ্র পরিবার থেকে নারী-পুরুষ সবাই মাংস নেওয়ার জন্য সবার বাড়িতে গিয়ে মাংস সংগ্রহ করত। তাদের অনেকেরই সারাবছর মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ ছিল না। এক ঈদে একজন বৃদ্ধলোককে মাংস দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘বাবা আমি মাংস কিনে খেতে পারি না। শুধু কোরবানি ঈদে মাংস খেতে পারি।’ তখন মাকে বলে আরও বেশ কিছু পরিমাণে মাংস বৃদ্ধ লোকটিকে দিয়েছিলাম। ওই ঘটনা আজও মনে পড়ে, স্মৃতিতে ভাসে।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান
বাবার সঙ্গে গরু কিনতে হাটে যেতাম
কাজী সিরাজ
ছোটবেলা কোরবানির ঈদে বাবার সঙ্গে গরু কিনতে হাটে যেতাম। তখন হাটে অনেক গরু দেখতে পেতাম, খুব ভালো লাগত। বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম, এত গরু কোথা থেকে আসে? বাবা বলতেন, ‘আমাদের কৃষকেরা অনেকেই গরু পালনন। বিদেশ থেকেও গরু এদেশে আসে। হাটে ২-৩ দিন ঘুরে পছন্দ হলেই গরু কিনে বাসায় ফিরতাম।
বাসায় ফিরে গরুর যতœ নিতাম। গরুকে খাবার দেওয়া, গোসল করানো, রাতে দেখাশোনা করা ইত্যাদি কাজ করতাম এবং ভালো লাগত। সকাল, দুপুর ও রাতে গরুর পরিচর্যা করা একটা চাকরির মতো হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত গ্রামে ঈদের ৬-৭ দিন আগেই গরু কেনা প্রায় শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখন ঢাকায় ঈদের আগের দিন গরু কেনা হয়। এতে আগের মতো সেই ঈদ উৎসব পাওয়া যায় না। কোরবানির পর মাংসগুলো আশেপাশের প্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতাম। অন্য গ্রামে বোনের বাড়ি থাকলে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতাম। খুব ভালো লাগত।
পরিচিতি: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান
বাবা নেই, শৈশবের তেমন ঈদ স্মৃতিও নেই
শাওন মাহমুদ
বাবা নেই, শৈশবের তেমন ঈদ স্মৃতিও আমার নেই। ঈদ উৎসব খুব সাধারণভাবেই পালন করি আমরা। উৎসবের যে আমেজ সেটা কখনও ছিল না, এখনও নেই। ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিদের জন্য একটু রান্না-বান্না করা হয়। আমার কাছে ঈদটা খুব সাধারণ একটা দিনের মতোই। ঢাকাতেই আমাদের বসবাস। আমার সঙ্গে মা থাকেন। আমরা এখানেই ঈদ করি।
পরিচিতি: শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান
ঈদের সময় অভাব কী তা ভুলে যেতাম সবাই!
আবু আহমেদ
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদে আমরা অনেকেই অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করি। শৈশব মানেই আনন্দের সময়, আর ঈদ আসলে তো আনন্দের শেষ নেই। ঈদ হলো, ছোটদের আনন্দের মুহূর্ত। আমিও শৈশবে ঈদের সময় অনেক আনন্দে থাকতাম, খুব আনন্দ করতাম। ঈদ-উল-আযহার সময় গরু কিনতে গরুর হাটে যেতাম বাবার সঙ্গে। বাজারের সবচেয়ে বড় গুরুটি কেনার চাইতাম। কিন্তু অনেক সময় বড় গরু কিনতে পারতাম না। যেটাই কিনতাম, খুব উপভোগ করতাম। দুই তিন দিন গরু বাজারে যেতাম। ঘুরতাম। তারপর গরু কিনতাম। একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে দিন পার করতাম।
এখন সেই আনন্দ হয়ে গিয়েছে কৃত্রিম, কৃত্রিমতায় ভরপুর। ঈদ বলতে যেটা বোঝায় সেটা ৫০-৬০’র দশকে আমরা পেয়েছি। তখন দেশে খুব অভাব ছিল, কিন্তু ঈদের সময় সে অভাব ভুলে যেতাম সবাই। গ্রামাঞ্চলে ঈদের একটা আমেজ ছিল। কিন্তু সে আমেজ এখন গ্রাম থেকে হারিয়ে গিয়েছে এবং কৃত্রিমতা এসেছে। এখন সবাই প্রায় স্বচ্ছল হয়েছে আগের তুলনায়। আগের থেকে এখন অনেক বেশি গরু কোরবানি হচ্ছে, কোরবানির মাংস দিয়ে সবাই ফ্রিজ ভর্তি করে রাখছে, সেগুলো পঁচে যাচ্ছে কিনা সেটারও খবর নেয় না কেউ। আগে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আমরা সবাই একত্র হতাম এবং চাঁদ দেখতাম। এখন আর চাঁদ দেখার দরকার হয় না। টিভিতেই চাঁদ ওঠার খবর শুনতে পাই এবং ঈদ করি। কিন্তু এখন চাঁদ দেখার মতো স্কোপ নেই, উচু-উচু দালান-কোঠায় ভরপুর শহর। তাই আগের মতো চাঁদ দেখার সময় মজা বা আনন্দ পাই না। এ স্মৃতিগুলোই এখন অনেক মনে পড়ে।
এবারের ঈদ ঢাকাতেই করতে হবে। কারণ, ছেলেমেয়ে এখানে আছে। আমি না থাকলে ছেলেমেয়েরা মন খারাপ করে থাকে। বাড়িতে আমার ভাই আছে, তাদের কিছু টাকা পাঠিয়ে দিই। ছেলেমেয়েদের কারণেই মূলত গ্রামের বাড়িতে ঈদ করা হচ্ছে না আমার। তবে, ঈদের আগে বা পরে বাড়িতে ঘুরে আসি। সবসময় যে বাড়িতে যেতে পারি তাও না, তবে সবসময় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান
‘কেন সবাইকে জামা দেখাও?’
প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম
শৈশবের অনেক মজার স্মৃতি আছে। আমরা তো সরকারি কোয়ার্টারে থাকতাম, আমরা সব বাচ্চারা মিলে একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে যেতাম। তখন একটা রেওয়াজ ছিল, ঈদের সময় ঈদের কাপড় আগে দেখাবে না। একটা দর্জির দোকানে লুকায়ে বাচ্চারা কাপড় নিয়ে আসত। যাতে কেউ জামাটা না দেখে। একটা ধারণা ছিল, আমার জামা দেখলে কি পুরনো হয়ে যাবে। তাই আমি জানালার মধ্যে দিয়ে ঝুলিয়ে দেখিয়ে দিতাম। তখন খুবই মজা পেতাম যে, সবাই আমার জামা দেখেছেন। কিন্তু আমার বোন কষ্ট পেতেন, যিনি জামাটা সেলাই করতেন। বলতেন, ‘কেন সবাইকে আগে আগে জামা দেখাও?’ কিন্তু বারণ শুনতামনা। সবাইকে জামা দেখিয়ে দিতাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পর থেকে এখানেই ঈদ করি।
পরিচিতি: উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ / সম্পাদনা: আশিক রহমান
গোশত বিতরণ খুব উপভোগ করতাম
ড. এম শামসুল আলম
ছেলেবেলায় গ্রামে, বাবা-মায়ের সঙ্গেই ঈদ উদ্যাপন করতাম। তখনকার সময় ঈদের আমেজটা ছিল অন্যরকম। গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেছি। অনেক বন্ধু ছিল। তাদের সঙ্গে ঈদের দিন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতাম। আর যখন এলাকায় থাকতাম, তখন এলাকার কিছু বন্ধু ও অন্যান্য ছেলেরা কাচের মার্বেল খেলত। মার্বেল খেলাটা আমার কাছে বেশ ভালো লাগত। যারা ভালো খেলতে পারত, তারা জিতত। কিন্তু আমি খেলতে পারতাম না। আমি শুধু দেখতাম, ওরা খেলত।
গ্রামে তখন গরু কোরবানি দেওয়ার লোকের সংখ্যা খুব ছিল। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মাংস সংগ্রহ করত। একেকটা পাড়া মিলে দল থাকত, তাদেরকে ভাগ করে দেওয়া হতো পুরো সমাজে। গরু কোরবানি দেওয়ার পর মাংস ছাড়িয়ে গ্রামের প্রতিবেশিদের তাদের মধ্যে নিয়মানুযায়ী সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হতো। আমি তখন তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে যেতাম এবং মাংস বিতরণ খুব উপভোগ করতাম। এখন আগের মতো ঈদ উৎসব দেখা যায় না।
পরিচিতি: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম / সম্পাদনা: আশিক রহমান
শৈশবের ঈদগুলোই ছিল শ্রেষ্ঠ
ড. সাদেকা হালিম
আমার শৈশবের ঈদগুলোই ছিল শ্রেষ্ঠ ঈদ। কেননা তখন আমার বাবা বেঁচেছিলেন। এখন আমার বাবা বেঁচে নেই। বেঁচে নেই দাদা-দাদি, নানা-নানীর কেউ। তারা যখন বেঁচে ছিলেন, সে সময় আমরা যে আদর-আহলাদ পেয়েছি, তা স্মৃতিতে ধরে রাখার মতো। তাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অকল্পনীয়। আমরা অবশ্যই প্রতিযোগিতা করেছি, ঈদে আমাদের কার কয়টা জামা থাকবে ইত্যাদি নিয়ে। আমরা খুবই সাধারণ একটা জিনিসের মধ্যেও তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছি। এখন মনে হয়, ঈদ আসে আর যায়। কিন্তু এখনকার ঈদবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন আমরা দেখি, কোরবানির ঈদে না হলেও রোজার বা ঈদ-উল-ফিতরে পাখি ড্রেস পড়ছি, শাড়ি পড়ছি, লেহেঙ্গা পড়ছি।
আগে ঈদের পোশাক-আশাকে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির বিষয়গুলো অনেক গুরুত্ব পেত। সেখানে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে, ঈদ-উল-আযহায় আমি কত টাকায় গরু কিনলাম, পাশের বাসার লোকটা কত টাকার গরু কিনল, ওমুক-তমুকে কত টাকার গরু কিনল এসব। এটা এখন একটা গল্পের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে এসব ছিল না। যারা হতদরিদ্র গরিব মানুষ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আগেকার দিনে মানুষ ঈদের আনন্দ করত। এখন সেটার কমতি রয়েছে। দরিদ্রকে সঙ্গে নয়, নিজে নিজেই ঈদ করছি। অপরকে দেখানোর জন্যও বড় গরুটি কিনছি! ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে ঈদগুলো পালন করা উচিত। আমি এবারের ‘ঈদ-উল-আযহা’ পরিবারের সঙ্গে ঢাকাতেই করব।
পরিচিতি: সমাজবিজ্ঞানী
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ / সম্পাদনা: আশিক রহমান
আমার পছন্দের গরুটাই ছিল সবচেয়ে খারাপ!
হাবিবুল বাশার সুমন
শৈশবের সব ঈদ আমার কাছে অনেক আনন্দের ছিল। ভালোলাগার ছিল। এখনও ঈদে অনেক আনন্দ করি। তবে শৈশবের ঈদ ছিল অন্যরকম। তখন তো বছরে একবার কাপড় পড়তাম। ওই কাপড়গুলো লুকিয়ে রেখে ঈদের দিন পড়া। আমাদের অনেক বড় পরিবার। ভাইদের মধ্যে আমি সবার ছোট। বড় ভাইয়েরা গরু কেনার কাজটা করতেন। একবার আমি হাটে গিয়েছিলাম, গরু কিনব বলে। আমার পছন্দকে মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কোরবানি দেওয়া জন্য আমরা যতবার গরু কিনেছিলাম, তার মধ্যে আমার পছন্দের গরুটাই ছিল সবচেয়ে খারাপ। এরপর থেকে আমি আর গরু কেনার মধ্যে যাই না। আমি সবসময়ই ঈদ গ্রামের বাড়িতে করি। কুষ্টিয়ায় আমার বাড়ি, সেখানেই পরিবারের সবাই থাকেন। আমি একা শুধু ঢাকা থাকি। দেশে থাকলে অবশ্যই ঈদ বাড়িতে করি।
পরিচিতি: সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ / সম্পাদনা: আশিক রহমান (এরপর পৃষ্ঠা-৬)