ইখলাস ছাড়া কবুল হবে না আমল
া যুবাইর ইসহাক হযরত ওমর ফারুক রা. বলেন, উম্মে কায়েস নামে এক নারী মদিনায় হিজরত করেছিল। তাঁকে বিয়ে করার জন্য এক ব্যক্তি মদিনায় হিজরত করল। যে মূলত আল্লাহর দীনকে সাহায্য করার জন্য হিজরত করেনি। তখন রাসুল সা. বললেন, যাবতীয় আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়ত করে। সুতারাং যাঁর হিজরত আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য হবে। তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের হিসাবে গণ্য হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া পাওয়া বা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হবে। তার হিজরত সে হিসাবে পরিগণিত হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে।
মহান আল্লাহর কাছে কোন কাজ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ইখলাছ। ইখলাছ বা নিষ্ঠা ছাড়া তিনি কোনো আমল কবুল করেন না। ইখলাছ হচ্ছে, কেবল আল্লাহর জন্য আমল করা। আল্লাহ চান মানুষ কেবল তাঁর জন্য আমল করুক। কোনো লৌকিকতা বা সুখ্যাতির জন্য নয়।
আবু উমামা বাহেলি রা. থেকে বর্ণীত-তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সা. এর কাছে এসে বলল, ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার কী অভিমত, যে প্রতিদান ও সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, তার জন্য কী রয়েছে? রাসুল স. বললেন, তার জন্য কিছুই নেই। লোকটি এ কথা তিন বার পুনরাবৃত্তি করলে রাসুল সা. তাকে বললেন, তার জন্য কোনো কিছু নেই। তারপর বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর জন্য নিষ্ঠার সাথে ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা আমল ব্যতিত অন্য কোনো আমল কবুল করেন না। নাসায়ি
নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি সব কিছু গ্রহণযোগ্যতার জন্য ইখলাছ জরুরি। রাসুল সা. বলেন, তোমার দীনকে খাঁটি করো। অল্প আমলেই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। নামাজ রোজার উদ্দেশ্য যদি থাকে লৌকিকতা, তবে সম্পুর্ণ কষ্ট বৃথা। হজ্বের উদ্দেশ্যে যদি থাকে লোকের মুখে হাজি ডাক শুনা, তবে এত টাকা এত কষ্ট সব কিছু অনর্থক। কোরবানির উদ্দেশ্য থাকে যদি মাংশ খাওয়া বা প্রতিযোগিতা।
অন্যের চেয়ে বড় কোরবানি দেওয়া তবে সবকিছু বিফল। রাসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক সুরত ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। মিশকাত
আমল দ্বারা উদ্দেশ্য হতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি। দুনিয়াবি কোন কিছু অর্জন নয়। দুনিয়ার এই সামন্য বস্তু কামনায় মহান আমলটি নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। বর্ণীত আছে, বনী ইসরাইলে একজন আবেদ ছিলেন। একবার তাঁর গোত্র এসে তাঁর কাছে বলল, এখানে একটি সম্প্রদায় আছে, যারা বৃক্ষের পূজা করা। আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে। আবেদ তখন ভীষণ রাগান্বিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটার জন্য কুড়াল হাতে নিয়ে ছুটলেন। পথে শয়তান একজন বৃদ্ধের বেশে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছো?
আবেদ বললেন, আমি ঐ গাছটি কাটতে যাচ্ছি, লোকেরা যে গাছের পূজা করে। শয়তান বলল, আমি কখনো তোমাকে ওই গাছটি কাটতে দেব না। অবশেষে দুই জন বিবাদে লিপ্ত হলেন এবং আবেদ হলেন জয়ী। তখন শয়তান তাকে বলল, আপনি ফিরে যান এর বিনিময় আমি আপনাকে দুই দিনার দেব। আবেদ সম্মত হয়ে ফিরে গেলেন।
প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন শয়তান আবেদকে দুই দিনার করে দিল। কিন্তু তৃতীয় দিন আবেদ আর কোনো দিনার পেলেন না। আবেদ এবারও রাগান্বিত হয়ে হাতে কুড়াল নিয়ে গাছটি কাটার জন্য বের হল। পথেমধ্যে আবার শয়তান বৃদ্ধ বেশে আবেদের সঙ্গে সাক্ষাত করল। এবং গাছটি কাটতে বাঁধা দিলেন। আবার উভয়ে বিবাদে লিপ্ত হলেন। কিন্তু এবার জয়ী হল শয়তান। আবেদ জিজ্ঞেস করলেন, গতবার বিজয়ী হয়েছি আমি। কিন্তু এবার কীভাবে তুমি জয়ী হলে?
শয়তান বলল, গতবার তুমি রাগান্বিত হয়েছিলে আল্লাহর জন্য। আর তোমার আমল ছিল আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ। তাই আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন। আর এখন তোমার উদ্দেশ্য ছিল দিনার। যা নিজের জন্য। তাই আমি তোমার উপর জয়ী হয়েছি।
এক হাদিসে বর্ণীত আছে, কেয়ামতের দিন প্রথম ফয়সালা করা হবে তন্মধ্যে একজন হবেন শহীদ। তাকে ডেকে আল্লাহ নিয়ামত স্মরণ করাবেন। লোকটি এগুলো চিনবে এবং স্বীকার করবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এই নেয়ামতের প্রতিদান হিসাবে তুমি কী করেছো? লোকটি বলবে, আমি আপনার জন্য যুদ্ধ করেছি এবং শহীদ হয়েছি। তখন তাকে বলা হবে, মিথ্যা বলেছো, লোকে তোমাকে বীর পুরুষের বলুক এ জন্য তুমি যুদ্ধ করেছো। তখন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় বিচার হবে ওই আলেমের যে ইলিম শিক্ষা করেছে, এবং শিক্ষা দিয়েছে। এবং কোরআন তেলাওয়াত করেছে। তাকে ডেকে নেয়ামত স্মরণ করানো হবে। এবং লোকটি স্বীকার করবে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন ওই সব নিয়ামতে পরিবর্তে তুমি কী করেছে। লোকটি বলবে, আমি আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইলিম শিক্ষা করেছি এবং শিক্ষা দিয়েছি, এবং কোরআন পড়েছি। উত্তর হবে, মিথ্যে বলছো, তুমি এজন্য ইলিম শিক্ষা করেছিলে যে লোকে তোমায় আলেম বলবে। এজন্য কোরআন শিক্ষা করেছিলে, লোকে তোমায় কারী বলবে। সুতারাং উদ্দেশ্যে তো অর্জন হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।