শুধু পশু নয় চাই পশুত্বের কোরবানি
া মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে মুমিনের মুখভরা হাসি। ঈদুল আযহা তথা কোরবানির ঈদ। কোরবানি মানে নৈকট্য। কোরবানি মানে উৎসর্গ। আল্লাহর নামে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পশু উৎসর্গ করাই কোরবানি। কোরবানি এক মহা ইবাদাত। ইবরাহিমি সুন্নাত। ঈসমাইলি আত্মত্যাগ। মহান আল্লাহর নিদর্শন আর কুদরত। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কোরবানির উট ও গরুকে তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত করেছি। তাতে আছে কল্যাণ। সুরা হজ: ৩৬
১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সুস্থমস্তিস্ক সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক ধনাঢ্যের উপর এ কোরবানি ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানি না করলে হবে গুণাহগার। রাসুল সা. এরশাদ করেন, সামর্থ্য থাকা সত্বেও যে কোরবানি করলনা সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। কোরবানি আনুগত্ব ও খোদাভক্তির অনুপম দৃষ্টান্ত। এ যেন আনুগত্য ও একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়া। প্রভূত্বের সামনে আত্মসমর্পন করা। নিজেকে সপে দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় ও কোরবানি কর। সুরা কাউসার: ২
মুমিনের ইবাদত হবে মালিকের দুয়ারে মালিকের তরে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নবি আপনি বলুন! আমার নামাজ আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মরণ সবই প্রতিপালকের জন্য।
কোরবানি এক আত্মশুদ্ধির নাম। তাকওয়া পরহেজগারি ও খোদাভীরুতার অপার সম্ভাবনাময় ইবাদাত। প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি নেক। সাহাবি যায়েদ ইবনে আরকাম সূত্রে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম কোরবানির লাভ জানতে চায়লে রাসুল সা. বলেন, পশুর শরীরের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব। ইবনে মাজাহ
আল্লাহ তায়ালা মুমিনের কোরবানির পশু গোশত কিংবা রক্ত চায়না। শুধু চায় মুমিনের খোদাভীরুতা। মুমিনের আত্মার পরিশুদ্ধি। চায় পশু কোরবানির সাথে পশুত্বের কোরবানি। কুরআনের ঘোষণা, আল্লাহর কাছে কোরবানির গোশত ও রক্ত পৌছে না। পৌছে তোমাদের তাকওয়া। সুরা হজ: ৩৭
ধনী মুমিন পশু কোরবানি করবে। গরিব অনেকেই হয়তো তা পারবে না। তবুও থাকবে ভ্রাতৃত্ববোধ। গরিবের প্রতি ধনীর মায়া মমতা সহমর্মিতা। করবে আনন্দের ভাগাভাগি। ধনীর কোরবানিতে থাকবে দরিদ্রের অংশ। সাদা কালো ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে ধনী কোরবানির গোশত নিজে খাবে। খাওয়াবে প্রতিবেশীকে। দিবে নিকটাত্মীয়দের। দান করবে গরিব অসহায় অন্নহীনকে। রাসুল সা. শিখিয়েছেন, তোমার কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে খাবে। আরেক ভাগ নিকটাত্মীয়দের জন্য। এক ভাগ সমাজের গরিব অসহায়দের জন্য।
কোরবানির ঈদানন্দ আমাদের শেখায়, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে। জাগ্রত করে মনুষত্বকে। শেখায়, ত্যাগের মহিমায় কল্যাণ বয়ে আনবে।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাদ ঢাকা।