মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মানজুর হোসাইন
কৃত্রিমভাবে পশু মোটাতাজা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। উচ্চ আদালত হরমোন প্রয়োগে পশু মোটাতাজাকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্বেও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধ-অসৎ কার্যক্রম। পশুর দেহে ক্ষতিকর হরমোন বন্ধে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দিযেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। অনেক হাটেই সুস্থ্য ও অসুস্থ পশু সনাক্তের জন্য পশু বিশেষজ্ঞ থাকেন। তবে এধরণের হাট খুবই কম। ক্রেতারা সচেতন হলে পশু মোটাতাজা করণে জীবনঘাতক ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ হবে। একটু সচেতন হলেই সুস্থ্য পশু ক্রয় সম্ভব হবে। প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা গরুর পাঁজরের হাড় দেখা যায় এবং দুই হাড়ের মধ্যে একটা ঢেউয়ের ভাব থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংসল স্থানে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে অনেক দেবে যায় যা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে হয় না। কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মধ্যে ঝিমানো ভাব থাকবে, যা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে থাকে না।’
ডা. এম. এ. কাদের
অধ্যাপক ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান, তায়রুননেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, তারগাছ, গাজীপুর
গরু মোটাতাজা করণে ‘স্টেরয়েড ও ডাইক্লোফেন’ নামে দুটি হরমোন প্রযৈাগ করা হয়। এদুটি মেডিসিনই মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মেদ, অন্ধত্ব, পেশির দুর্বলতা, হাড় ক্ষয়, চুল পড়াসহ নানান জটিল সমস্যা দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয় এই স্টেরয়েড হরমোন। ডাইক্লোফিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্টেরয়েডের চেয়েও ভয়ংকর। আগে পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেন ব্যবহার করা হত। এ মেডিসন প্রয়োগকৃত গরু মারা যাওয়ার পর ওই গরুর মাংস খেয়েছে- এমন শকুন দুই থেকে তিন দিনের মাথায়ই মারা যেত। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনা মেডিসিনের গবেষক ড. লিন্ডসে ওঁক এর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর এই তথ্যটি বেরিয়ে আসে। এর পরপরই বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হতে থাকে জীবন ঘাতক এ ওষুধ। আমাদের দেশেও নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন। ডাইক্লোফেন দ্বারা মোটাতাজাকৃত পশুর মাংস খেলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধমনী বিকল হয়ে হৃদরোগ এমনকি ব্রেনস্ট্রোকও হতে পারে। কিডনি ও লিভার বিকলসহ পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও থাকে এ ধরনের পশুর মাংস খেলে।