
সন্ত্রাসী অর্থায়নের সন্দেহ থেকে মুক্ত হলো বাংলাদেশ
জাফর আহমদ: মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি)। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে চলমান এপিজির ১৯তম বার্ষিক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার সময় এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। গত বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ সন্ত্রাসী অর্থায়নের বিষয়ে এপিজির পর্যবেক্ষণে ছিল। পর্যবেক্ষণ শেষে পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত হলো বাংলাদেশ।
বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর বলে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ আহমেদ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সন্ত্রাস এবং জঙ্গির বিরুদ্ধে ‘জিরো‘ টলারেন্স অবস্থানের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত তালিকায় প্রবেশ করেছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।
এপিজির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রেটিংয়ে নরওয়ে, শ্রীলংকা থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূলকরণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা যায়, এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যালোচনা করে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী আন্তঃদেশীয় সংস্থা এফএটিএফের ৪০টি সুপারিশের টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্সের বিপরীতে ৬টি সুপারিশ, ২০টি সুপারিশে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক এবং ১৪টি সুপারিশে আংশিক স্বীকৃতির রেটিং প্রদান করা হয়েছে। এ স্বীকৃতি শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া ও নরওয়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ।
এর আগে বাংলাদেশের উপর প্রথম ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আর্থিক খাত নির্ধারক কর্মসূচি নামে একটি মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। সে সময় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’ বিবেচিত হয়। ২০০৮ সালে ২য় মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় এপিজি দ্বারা অকৃতকার্য হয়। এরপর ২০১০ সালে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইনসহ বিভিন্ন বিধি-বিধান, প্রজ্ঞাপন, গাইডলাইন প্রণয়ন করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সংস্কার সাধন করে, ফলে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সম্পর্কিত প্রক্রিয়া হতে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত স্বীকৃতি পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকর মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণের অধীনে আনা হয়েছে। ব্যাংকগুলো শতভাগ কমপ্লায়েন্সড। সন্ত্রাস দমন, সন্ত্রাসে অর্থায়ণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অবস্থান, তা প্রতিফলন করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। তারই অংশ হিসাবে এপিজের বৈঠকে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিএফআইইউ প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালকসহ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থমন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই, বিএফআইইউর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
এ অনুমোদন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি শোলাকিয়ায় বড় ধরনের ঘটনার আগে জঙ্গিদের ধরে ফেলা; কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিদের হামলার আগেই বাংলাদেশ জঙ্গি দমনে যে সক্ষমতা দেখিয়েছে তা কৃতিত্বের দাবিদার। তাছাড়া এ পর্যন্ত বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো জঙ্গি অর্থায়নের ঘটনা ঘটেনি এবং জঙ্গি অথৃায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তার ফলে এ স্বীকৃতি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ স্বীকৃতির পর বাংলাদেশে অভ্যান্তরীন খাতেও যে ‘উল্টোপাল্টা’ অর্থায়ন হচ্ছেÑ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারবে। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম
