এস এম নূর মোহাম্মদ : ‘আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বেয়নেটের খোঁচায় সংবিধান সংশোধন করে (৯৬ অনুচ্ছেদ) সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। তবে সেই সামরিক ফরমান উপড়ে ফেলা তথা অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে আমাদের তৎকালীন সুপ্রিম কোর্ট ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৫ সালে আমাদের সুপ্রিম কোর্টকে সেই লজ্জা থেকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, তার পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের মাধ্যমে।’
জাতীয় সংসদ কর্তৃক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতার পক্ষে মতপ্রকাশ করে দেওয়া বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের রায়ের অংশে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলা হয়।
এর আগে গত ১১ আগস্ট তিন সদস্যের বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় প্রকাশিত হয়। যাতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক।
সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে বলা হয়, ‘বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্মাবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন। এটা সংবিধানের দুটি মূল কাঠামো ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭ (বি) অনুচ্ছেদকেও আঘাত করে।’
তবে গতকাল প্রকাশিত বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের ১২৫ পৃষ্ঠার রায়ের অংশে বলা হয়, ‘রিট দায়েরকারী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪ সংবিধানের সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ। রিট আবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখলাম, আবেদনের কোথাও আবেদনকারী সুস্পষ্ট করে বলেননি, সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ষোড়শ সংশোধনী প্রণয়ন করা হয়েছে। সুতরাং এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বেয়নেটের খোঁচায় আর্মি রুলস ভঙ্গকারী জিয়াউর রহমানের একক ইচ্ছায় প্রণীত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সম্বলিত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বর্ণিত মহান আদর্শসমূহের পরিপন্থী তথা অসাংবিধানিক।’
এতে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদ সংবিধানসম্মতভাবেই ষোড়শ সংশোধনী প্রণয়ন করেছে।’ এছাড়া অভিজ্ঞ বিচারক সংকট দিন দিন প্রকট হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বয়স ৬৭ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ করার প্রস্তাব করেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। সম্পাদনা: মোরশেদ