কবি ও সম্রাট রেজাউদ্দিন স্টালিন
হতাশাগ্রস্থ সম্রাটকে শ্লোক শোনাতে
সমবেত হলেন দেশের প্রখ্যাত কবিগণ
স্বর্ণবোতাম খচিত কেতাদুরস্ত কণ্ঠস্বরÑ
জাহাঁপনা আমি রচনা করেছি আপনার
পূর্বপুরুষের শৌর্যবীর্য গৌরবগাঁথা
আপনি ফিরে পাবেন হৃত মনোবল
আর দৃঢ়চিত্তে শাসন করবেন ভারতবর্ষ
বিপুল করতালি ও হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ল রাজদরবার
সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রাপ্য হলো তার
এগিয়ে এলেন মখমলের টুপি আর
জরিদার পাঞ্জাবি শোভিত বাবরি দোলানো কবি
হে মহাত্মন পুঁজনীয় ভারতেশ্বর
আমি লিখেছি আশ্চর্য সব চরণ
প্রতি পাঠে অনুভব করবেন আক্রোশ
হতাশাকে হত্যা করে জাগিয়ে তুলবে জিঘাংসা
করতালিতে কেঁপে উঠল দরবার কক্ষ
দুই সহস্র স্বর্ণমুদ্রা এনাম মিলল তার
সিল্কের শেরোয়ানি আর মূল্যবান পাথর পরানো টুপি
চোখে সুরমা পায়ে হরিণচর্মের নাগরাই হাতে ঘণ্টি
হেলে দুলে এলেন কবিÑ
আলমপনা হে সূর্যাধিপতি
আমি আপনার জন্যে পংক্তিবদ্ধ করেছি
এমন আশ্চর্য পদ যা আপনার যুদ্ধযাত্রার
দামামাকে করে তুলবে ক্লান্তিহীন ও উদ্দীপ্ত
আর আপনি থাকবেন আজীবন অপরাজিত
মুর্হুমুর্হু করতালি আর কানফাটা উল্লাসধ্বনি
তিন সহস্র স্বর্ণমুদ্রায় ডুবে গেল কবির করতল
সবশেষে এলেন ধীরপায়ে বিনম্রবসন সাদা পাগড়িশোভিত
শ্মশ্রুম-িত এক আয়াত চোখের কবিÑ
মহামান্য সম্রাট আমি রাতের পর রাত বিনিদ্র থেকেছি
কিন্তু আপনার তুষ্টির জন্য কোনো শ্লোক রচনা করতে পারিনি
বারবার ব্যর্থ হয়েছি আমিÑ ক্ষমা করবেন জাহাঁপনা
ভয়ঙ্কর নিরবতায় ভরে গেল সভাকক্ষ
সম্রাট বাহাদুরও বাকরুদ্ধ হতবিহ্বল
বহুকাল পর লোকে জেনেছিল
কবির নাম মীর্জা গালিব
পরিচিতি: কবি