
জিয়ার পদক ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র চার ঘণ্টা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক ও সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জাদুঘরকে সময় দেওয়া হয় মাত্র চার ঘণ্টা। এ সময়ের মধ্যে পদক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব গ্রহণ করবেন বলেও জানানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্ম-সচিবের সঙ্গে জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ইকরাম আহমেদ ৮ সেপ্টেম্বর সকালে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক করার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পদক ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এ জন্য ওই বৈঠকের পরপরই জাদুঘরে যান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সিনিয়র সহকারী সচিব। তার হাতে পদক ও সম্মাননাপত্রটি তুলে দেওয়া হয় জাদুঘরের ইতিহাস বিভাগের তরফ থেকে। এ সময় জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ইকরাম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিয়াউর রহমানের পদক ও সম্মাননাপত্রটি দ্রুত সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ও কার্যকর করা হয়। এ জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরস্কার ও সম্মাননাটি পৌঁছে দিতে বলে। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর সকালে এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে বৈঠক হওয়ার পর বিকাল পাঁচটার আগেই নিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। কেমন করে নেওয়া হবে এ বিষয়ে মূলত আলোচনা হয়।
পদক ও সম্মাননাপত্রটি হস্তান্তরের সময়ে কোন প্যাকেটে দেওয়া হয়েছে বা কিভাবে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, পুরস্কার ও সম্মাননাপত্রটি স্টোর রুমে থাকার কারণে সেটাকে প্যাকেট করে রাখা হয়েছিল। প্যাকেট করে রাখার কারণে যখন সিনিয়র সহকারী সচিব জাদুঘরে যান তখন সেটা তার সামনে আনা হয় এবং প্যাকেট খুলে তাকে দেখানো হয়। তিনি সেটা দেখার পর অক্ষত অবস্থায় সেটি গ্রহণ করেন।
সূত্র জানায়, জাদুঘরের তরফ থেকে পুরস্কার ও সম্মাননাটি মন্ত্রিপরিষদের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন করা হয়। এ জন্য ওই সিনিয়র সহকারী সচিবকে একটি লিখিতও দিতে হয়। সেখানে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সে সঙ্গে জাতীয় পদক প্রদানসংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির সিদ্ধান্ত, এর স্মারক নম্বর ও প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বাতিলের সুপারিশে অনুমোদন দিয়েছেন সে কথা উল্লেখ করে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেরত দেওয়া হলো তা বলা হয়।
এরপর ওই সিনিয়র সহকারউ সচিব সেখানে হাতে লিখেন পুরস্কারের পদক ও সম্মাননাপত্রটি মন্ত্রিপরিষদের তরফ থেকে ফেরত নেওয়া হলো। তিনি যে তা গ্রহণ করেছেন সেটাও লিখেছেন।
জিয়াউর রহমানের পুরস্কার এত কম সময়ে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে নিরাপত্তাজনিত একটি বিষয়ও ছিল। কারণ ধরে নেওয়া হয়েছিল এ ঘটনা জানাজানি হলে বিএনপি এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারে। এছাড়াও সমর্থকদের কেউ কেউ কিংবা কোনো গোষ্ঠী জাদুঘরে হামলা করতে পারে। যখনই এটা প্রকাশিত হয়েছে যে পুরস্কার জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়েছে, তখন নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা দেখা দেয়। সে আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। এছাড়াও ঈদের ছুটি আসছে। ঈদের ছুটির মধ্যে সেটি আর জাদুঘরের স্টোরে রাখার কোনো সুযোগ ছিল না। সব মিলিয়েই দ্রুত তা ফেরত দিতে বলা হয়।
সূত্র জানায়, সরকারের কাছে খবর ছিল বিএনপি এ পুরস্কার বাতিলের ইস্যুকে সামনে রেখে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দিতে পারে। সেটা হলে জাদুঘর থেকে পুরস্কার বের করে নেওয়া কঠিন হতো। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারতো। এ কারণে সরকার এ ব্যাপারে কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি।
জিয়ার পদক কোথায় এখন জানতে চাইলে সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারছেন না বলে জানান। পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
