ঈদ যাত্রা সড়কে ভোগান্তি, রেলে স্বস্তি
আনিসুর রহমান তপন: ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটে ছিল যাত্রীদের ভিড়। সবাই ছুটেছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনালে সকাল থেকেই দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বেলা যতো বেড়েছে, যাত্রীদের চাপ বেড়েছে তত।
এদিকে, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট ও বাসের সিডিউল বিপর্যয় আনন্দের সড়ক যাত্রাকে পরিণত করেছে দুঃস্বপ্নে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের কারণে সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলগামী পরিবহনগুলো। এতে করে টার্মিনাল ও বাস কাউন্টারে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। কাউন্টারে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তায়, খোলাস্থানে লাগেজ নিয়ে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। টার্মিনালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দূরপাল্লার কোনো বাস নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা ছাড়তে পারছে না। একই সময়ে মহাসড়কে বাড়ছে গরুবাহী ট্রাকের চাপ। এদিকে, নদীতে ফেরিঘাট সংলগ্ন স্থানে ভাঙন বাড়ায় সময়মতো পার হতে পারছে না যাত্রীবাহী বাসগুলো। এতে যাত্রার সময় বাড়ছে, সঠিক সময়ে কোনো বাসই ঢাকায় ফিরতে পারছে না। এ কারণে ঢাকা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ছে না কোনো বাস। একদিকে ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় মহাসড়কে থমকে আছে যাত্রীবাহী বাস। আবার ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা এড়াতে বিকল্প পথে যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে অতিরিক্ত পরিবহনের চাপে তৈরি হয়েছে দুঃসহ যানজট। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। ফলে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গগামী গাড়িগুলো পড়েছে সিডিউল বিপর্যয়ে।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ওবায়েদ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রীর চাপ বেড়েছে। শুক্রবার রাতে সেটি আরও বাড়বে। আর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে যানজটের কারণে সময়মতো ছাড়া যাচ্ছে না কোনো গাড়ি। সামনের দিনগুলোতে এ যানজট আরও বাড়বে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
উত্তরবঙ্গগামী নাবিল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিঠু জানান, সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে যে বাস ছাড়ার কথা, সেটা ছেড়েছে ১১টায়। ৮টা, ৯টার গাড়ি কখন ছাড়বে, সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না।
সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কাউন্টার কর্মকর্তারা যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে কাউন্টার খালি রেখে বাইরে ঘোরাফেরা করছেন তারা।
আসাদুজ্জামান নুর নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, গাড়ি কখন আসবে কেউ বলতে পারছেন না। কাউন্টারে বসার জায়গা নেই। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অনেকবার কাউন্টারে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ ধরেনি। যানজটে দুর্ভোগের বিষয়ে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার তোফায়েল বলেন, যানজটের কথা তো বলা যায় না, তাই কখন গাড়ি ছাড়বে বলা মুশকিল। এছাড়া এ সিডিউল বিপর্যয় ঈদের আগের রাত পর্যন্ত থাকবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে, কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা স্বস্তিতেই ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। ট্রেনের সিডিউল এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে স্টেশনের প্লাটফর্মে। একের পর এক ট্রেন আসছে আর যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যাচ্ছে।
সকাল ৮টায় ৩ নম্বর প্লাটফর্মে রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষায় থাকা সেলিম কামাল জানান, ঈদের ঠিক আগে যাত্রী চাপ এড়াতে একটু আগেভাগেই ঢাকা থেকে বাড়ির পথ ধরেছি। আরেক যাত্রী শাহজালাল বলেন, প্রতি ঈদ পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করি। এবারও যাচ্ছি। অগ্রিম টিকিট নিয়েছি, এখন আনন্দ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
এদিকে রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, বুধবারের মতো গতকালও রংপুর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে প্লাটফর্মে আসেনি। ট্রেনের বিলম্ব হওয়ায় স্টেশনে বাড়ছে ভিড়। যারা নিরাপদে যেতে আগেই চলে এসেছেন, কিছুক্ষণ পরপর তারা স্টেশনে ডিজিটাল স্ক্রিনে ট্রেনের সিডিউলের দিকে তাকাচ্ছেন।
সকাল ৯টার দিকে ৫ নম্বর প্লাটফর্মে দেখা গেছে, দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস, ৩ নম্বর প্লাটফর্মে অগ্নিবীনা ছাড়াও যাত্রীর অপেক্ষায় রয়েছে রাজশাহী এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহগামী ইশা খান এক্সপ্রেস ও সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখনও স্টেশনে পৌঁছায়নি। এলেই যাত্রী নিয়ে ফিরবে। বাকি সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়বে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক উদ্বোধন করেন, নতুন আন্ত:নগর ট্রেন ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’।
রেল সূত্র জানায়, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে এসি চেয়ার কোচে ৫৮টি, প্রথম শ্রেণির ২৭টি, শোভন চেয়ার ১৮০টি, শোভন চেয়ার কোচ ৩৬০টিসহ পাওয়ার কার ও খাবার বগিতে আরও ৪০টি আসন রয়েছে। ১৪টি বগির এ ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে সোমবার। সম্পাদনা: মোরশেদ