এল আর বাদল: মাত্র ছয়দিন আগে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে নারী ফুটবলাররা। টানা দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ের মুকুট অক্ষুণেœর পর দেশের মাটিতেও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে প্রথমবারের মতো খেলার গৌরব অর্জন করেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। একই সঙ্গে গোটা বিশ্বকে শুনিয়ে দিয়েছে বাঘিনীর গর্জন।
এত কিছুর পরও সানজিদা-মারিয়া-তহুরারা উপেক্ষিত খোদ দেশের ফুটবলের শাসক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফের কাছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব খেলতে ঢাকায় এসে বিলাসবহুল হোটেলে ছিলেন অন্য দেশের মেয়েরা। বাংলাদেশিরা ছিলেন ফেডারেশনের ডরমিটরিতে। বিদেশিরা খেয়েছেন দামি-দামি খাবার। আর বঙ্গমেয়েদের কপালে জুটেছে ক্যান্টিনের খাবার। অন্যরা ‘গো’ হারা হেরেছে আর বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। খেলা শেষে তারা ফিরেছে বিশেষ বিমানে। স্বাগতিক দেশের মেয়েরা লোকাল বাসে।
বলা যায় বাংলাদেশের মেয়েরা বাফুফের কাছে অবহেলারই পাত্রী। এ মেয়েরা একবার কিংবা দুবার নয়, গৌরব অর্জনের প্রতিটি ধাপ শেষেই অনাদরে-অবহেলায় লোকাল বাসে চেপেই মমতাময়ী মায়ের বুকে ফিরতে হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে ঢাকার মহাখালী থেকে বাসে উঠলে তারা বিকাল ৩টার দিকে পৌঁছায় বাড়ি। ঘাটে ঘাটে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলায় তাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়, বাসে বখাটে তরুণদের কটূক্তিও শুনতে হয়। দুর্ভোগের এ কথা জানিয়ে মার্জিয়া বলেন, ‘বাফুফের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাড়ি পৌঁছতে পারলে আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হতো। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তাও কমত।’
এ ব্যাপারে বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেন, লোকাল বাসের প্রসঙ্গ উঠেছে। আমরা তো তাদের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। মেয়েরা বলেছে, ভাড়া করা বাসে যাবে। তবে কোনো অবস্থায়ই কটূক্তি মেনে নেওয়া যায় না। এটা উদ্দেশ্যমূলক করা হয়েছে কিনা তাও আমরা দেখব। মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকৃত ঘটনা জানব। তাদের নিয়ে কটূক্তি করা হলে বাফুফে অবশ্যই তদন্ত করবে।
এদিকে বাফুফে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, মেয়েদের এসি বাসের কথা বলা হলেও তারা যেতে চায়নি। অস্বস্তি হবে বলে লোকাল বাসে করেই বাড়ি ফিরতে চেয়েছে। বাফুফে থেকে ভালো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা লোকাল বাস চায়। শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক মেয়েকে লাগেজসহ বাফুফের তত্ত্বাবধানে বাসস্টেশনে পেঁৗেছ দেওয়া হয়।
বিবৃতি প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, আমার মনে হয় একজন মেয়ে ঘটনার দিন সকালে (৬ সেপ্টেম্বর) বাবার সঙ্গে একা বাড়ি গেছে। আর ২২ জনকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত বাফুফে থেকে পৌঁছে দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়েদের বাস ঠিক করার দায়িত্ব ছিল নারী ফুটবল কমিটির উপর। এ দলটির দায়িত্বে থাকা মাহফুজা আক্তার কিরণের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার কথা। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম