হিলারির স্বাস্থ্য নিয়ে প্রোপাগান্ডা বাড়ছে
এম রবিউল্লাহ ও পরাগ মাঝি : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের স্বাস্থ্য নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এগুলো এখনো গুজবের পর্যায়েই আছে। কারণ এ সম্পর্কিত অকাট্য প্রমাণ কেউ এখনো উপস্থাপন করতে পারেনি।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ক্রেমলিনে একটি বার্তা পৌঁছায়। বার্তাটি মার্কিন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের স্বাস্থ্য নিয়ে। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, হিলারিকে মাত্র এক মাস আগেই একটি মারাত্মক হৃদরোগের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। আর এমনটি হয়েছে মূলত তার বিগত বছরগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে। ফলশ্রুতিতে তাকে এখন কফ-কাশিজনিত পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিটা এখন তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাকে তার রক্ত পরিশোধন করতেও চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। সূত্র: সিএনএন ও হোয়াট ডাস ইট মিন অবলম্বনে
গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ সালে সিনেটর থাকাকালে হিলারির মদ্যপানাসক্তির কারণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এর তীব্রতা আরও বাড়ে ২০০৮ সালে। সেই সময় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক এ্যামি চোজিকও এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন।
সেই সময় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন তখন তাকে তার অফিস থেকে একটি ক্লিনিকেও স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে বাসায় পুরোপুরি বিশ্রামে পাঠানো হয়। তারপর ২০০৯ সালে তার আবারও মাত্রাতিরিক্ত পানাসক্তি শুরু হয়। আর সেই সময় থেকে তাকে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।
গত ২২ আগস্ট রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা হিলারি ক্লিনটনের স্বাস্থ্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মতো যথেষ্ট ভালো স্বাস্থ্য হিলারির নেই বলে ট্রাম্প অভিযোগ করেন।
এছাড়া ইন্টারনেটেও হিলারির স্বাস্থ্য নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য প্রচার করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, হিলারির সম্ভবত ব্রেইন টিউমার, পারকিনসন্স কিংবা ডিমেনশিয়া হয়েছে। হিলারি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। এর এক সপ্তাহ পর এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প হিলারি কোথায় ঘুমুচ্ছে প্রশ্ন রাখেন।
এর আগেও আইওয়ায় ভোটারদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি হিলারির নেই। আইএস কিংবা এ ধরনের শত্রুর মোকাবিলার মতো যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য হিলারির নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।
এদিকে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ও ট্রাম্পের সমর্থক রাডি গুলিয়ানি আগস্টের শুরুর দিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিলারির তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন, হিলারি ক্লান্ত। তাকে অসুস্থ দেখায়। অনলাইনে গিয়ে ‘হিলারি ক্লিনটন অসুস্থ’ শিরোনামে ভিডিও দেখার আহবান জানান রাডি গুলানি।
এছাড়াও ট্রাম্পের নারী মুখপাত্র ক্যাটরিনা পিয়েরসনও গত মাসে হিলারির কথা বলার সময় জড়িয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। যদিও ক্যাটরিনা চিকিৎসক নন।
এদিকে, হিলারির স্বাস্থ্য সমস্যা থাকার কথা অস্বীকার করে ‘টিম ক্লিনটন’ ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ডাক্তারের দেওয়া একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। সেখানে তার স্বাস্থ্য চমৎকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে হিলারির স্বাস্থ্য সমস্যার ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মূল নিহিত রয়েছে ২০১২ সালের একটি ঘটনার কারণে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের শেষপর্যায়ে এসে তিনি পাকস্থলীর ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং পানিশূণ্যতা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
ওই সময়ে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তবে পরে পরীক্ষা নিরীক্ষায় সবকিছু স্বাভাবিক ধরা পড়ে। এছাড়া তার ক্যান্সার পরীক্ষার ফলাফলও স্বাভাবিক আসে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীর স্বাস্থ্য নিয়ে বিতর্ক একটি বৈধ বিষয়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি