হংকংয়ে স্নোডেনের পালিয়ে বেড়ানোর গল্প
মিজানুর রহমান: তিন বছর আগের কথা। ফিলিফাইন থেকে হংকংয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন ভেনেসা মে বন্ডালিয়ান রনডেল। মেয়েকে নিয়ে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটে কোনোমতে দিন কাটছিল তার। একদিন দরজায় কড়া নাড়েন হংকংয়ের দুই আইনজীবী। সঙ্গে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি। জনাথন ম্যান ও রবার্ট টিব্বো নামে ওই দুই আইনজীবী রনডেলকে জানালেন তাদের সঙ্গের অজ্ঞাত সেই ব্যক্তির লুকানোর জায়গা দরকার। অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন।
রনডেল চেনেননি ¯েœাডেনকে। মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখেন একজন ভীত সন্ত্রস্ত লোক দাঁড়িয়ে। পরদিন স্নোডেন তাকে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকাটি এনে দিতে অনুরোধ করলে রনডেল পত্রিকা দেখেই বুঝতে পারেন, পৃথিবীর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মানুষটি এখন তার ঘরে। স্নোডেন সারা দিন-রাত রনডেলের কম্পিউটার ব্যবহার করতেন। রনডেলের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না, রবার্ট টিব্বো মোবাইলের মাধ্যমে তার জন্য ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেন। নিউইয়র্ক টাইমস
রাশিয়ায় পৌঁছানোর আগে স্নোডেনের পালিয়ে বেড়ানোর গল্পটা এমনই। মিরা হোটেল ত্যাগ করার পর সেখানে দুই সপ্তায় কয়েকটি স্থান পরিবর্তন করতে হয় তাকে। ওই দুই আইনজীবীই তার জন্য সব ব্যবস্থা করেন। জনাথন ও টিব্বো প্রথমে চিন্তা করেন স্নোডেনকে কোনো একটি গুদামে রাখবেন। পরে চিন্তা করেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা মানুষদের বাসাই সবচেয়ে নিরাপদ, সেখানে পুলিশ হানা দেয় না।
প্রসঙ্গত, এই দুই আইনজীবী রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা মানুষদের আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। স্নোডেনের আশ্রয়দাতারা তাদেরই মক্কেল।
রনডেলের বাসায় কয়েকদিন থাকার পর স্নোডেনের আশ্রয় হয় অজিথ পুষ্পকুমারার নামের আরেক আশ্রয়প্রার্থীর বাসায়। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায় নির্যাতনের শিকার পুষ্পকুমারা হংকংয়ে একটি রুমে কোনোমতে জীবন কাটাতেন। তার রুমেই স্নোডেন ছিলেন। প্রসঙ্গত, হংকংয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ভাতা হিসাবে যা দেওয়া হয় তাতে জীবন চালানো দায়। পুষ্পকুমারা বলেন, স্নোডেনের কথা শুনে আমার মনে হয় তার অবস্থাও আমারই মতো। আমিও তার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম।
হংকংয়ে স্নোডেনের তৃতীয় আশ্রয়দাতা ছিলেন সুপন থিলিনা কেল্লাপাথা। যিনি স্ত্রী ও এক শিশুকে নিয়ে ২৫০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। তাদের গল্পও পুষ্পকুমারার মতোই। কেল্লাপাথা বলেন, আমি স্নোডেনকে আশ্রয় দিয়ে কোনো ঝুঁকি নেইনি। তিনি মনে করেন স্নোডেনই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। তিন দিন স্নোডেন থেকেছিলেন সেই বাসায়। স্নোডেনকে বর্ণনা করতে দিয়ে তারা বলেন, অত্যন্ত ভদ্র ছিল তার ব্যবহার। তারা স্নোডেনের সঙ্গে আবার কথা বলতে চান, জানতে চান কেমন আছেন তিনি।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী