ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ হবে বস্তার গায়ে সেøাগান ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’
আনিসুর রহমান তপন : ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে হতদরিদ্র বলে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৬ সালে এটিকে হালনাগাদ করা হয়েছে। সেখানেও চরম দরিদ্রের তেমন হেরফের হয়নি। এ ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকেই ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে সরকার।
এ ব্যবস্থায় যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয়, সেজন্য ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় খাদ্য অধিদফতর বিষয়টি তদারক করবে। এজন্য ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। এ কমিটি সুবিধাভোগী নির্বাচন করবে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আরও আছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সমাজের দুইজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, সকল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারগণ ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে উপজেলা সুবিধাভোগী যাচাই কমিটিতে আরও আছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক/পরিদর্শক কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আর এ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে।
কমিটি ওয়ার্ডভিত্তিক দরিদ্রদের প্রকোপ ও দুস্থ বিবেচনা করে সুবিধাভোগী পরিবারের তালিকা প্রণয়ন ও অনুমোদনের মাধ্যমে পরিবার প্রধানের নামে ফেয়ার প্রাইজ কার্ড ইস্যু করবে। এ ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়ে একটি পরিবার ১০ টাকা দরে মাসে একবার ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশের ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের কাছে কম দরে চাল বিক্রি করে সহায়তা করবে সরকার। এতে সরাসরি উপকৃত হবে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ। মার্চ থেকে এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ মাস এ কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্ররা ১০ টাকা দরে চাল কিনতে পারবে।
কর্মসূচি বাস্তবায়নকালে অনিয়ম হলে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, কর্মসূচি চলাকালে দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও কর্মসূচি সংক্রান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিরোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। সব রকম অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, ‘ফেয়ার প্রাইজ কার্ডে’র মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সুবিধাভোগী পরিবারের প্রধানের নামে এ কার্ড ইস্যু করা হবে। কার্ডধারী ছাড়া কেউ এ কর্মসূচির সুবিধার আওতায় আসবে না। কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য যে চালের প্যাকেট করা হয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধে তাতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এসব প্যাকেট তৈরি করা হয় খাদ্য অধিদফতরের নিজস্ব গুদামে। প্রতি প্যাকেটে (বস্তা) ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ লেখা রয়েছে। এছাড়াও এ কর্মসূচির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সেøাগান ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা আছে। তাছাড়া প্রতিটা বস্তা কোন ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের মধ্যে বিক্রি করা হবে, সেই ইউনিয়নের নামটি পর্যন্ত লেখা থাকবে। কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটা ইউনিয়নে পাঁচশ পরিবারের কাছে মাত্র একজন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হবে। এখানেও সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, কারা এসব চালের সুবিধাভোগী হবেন। এরপরও যদি কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠে সেক্ষেত্রে শর্তভঙ্গের দায়ে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। শর্ত মোতাবেক অভিযুক্ত ডিলারের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করা হবে। সম্পাদক: মোরশেদ