ক্লায়েন্ট
যায়নুদ্দিন সানী
দ্বিতীয়বার তাকালাম। আবিষ্কার করলাম, মনের ভিতর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ‘এই মেয়ের হয়তো একটা দারুণ হৃদয়বিদারক কাহিনী আছে। একটু সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে হয়তো গল্পটা বলতেও পারে।’ নিজের ইচ্ছেকে জাস্টিফাই করবার টিপিক্যাল সস্তা যুক্তি আর কি।
গল্প উপন্যাসে এদের সম্পর্কে কিছু টিপিক্যাল গল্পই থাকে। হয়তো বেশিরভাগই সত্যিই। হয়তো কিছু গল্পকে ইচ্ছে করেই ‘মেলো ড্রামাটিক’ করা হয়। এ ব্যাপারে আমার নিজের ‘ফার্স্ট হ্যান্ড’ কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। তবে গল্প উপন্যাস পড়ে যতটা মনে হয়, সাধারণত এরা নিজেদের আসল গল্প বলে না। এই না চাওয়াটা কেউ সরাসরি বলে দেয় আবার কেউ অনেক মিথ্যা গল্পও তৈরি রাখে। মনকে প্রবোধ দিলাম, তেমন একটা গল্প পেলেও চলবে। তাই কি? নাকি অন্য কিছু?
কিছু ভেবে ওকে গাড়িতে উঠাইনি। আসলে কিছু ভাববার সময়ই পাইনি। ও লিফটা চেয়েইছিল লাইট গ্রিন হয়ে যাওয়ার কিছু আগে। কোনো প্রশ্ন করবার কিংবা ভাববার সুযোগ ছিল না। স্টার্ট দিতে হবে। পেছনে গাড়ির হর্ন বাজছে। আচ্ছা, মেয়েটা কি ইচ্ছে করেই সময়টা চয়েজ করেছিল? যেন আমি ভাববার সুযোগ না পাই? ইন্টারেস্টিং? বুদ্ধিমান বলতে হবে। ধীরে ধীরে ‘দেখা যাক কি হয়’ টাইপ একটা অবস্থান মনে তৈরি হতে শুরু করল। ও হয়তো নিজস্ব খেলা খেলতেই লিফট চেয়েছিল, এখন হয়তো আমি আমার খেলা খেলতে এই লিফট দিচ্ছি।
Ñব্যাচেলার তো না?
চিন্তায় বাধা পড়ল। ঠিক আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে না। সামনের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল কথাটা। ততক্ষণে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলেছি। ‘দেখি কি হয়’ অবস্থানে চলে এসেছি। এতে একটা সুবিধা হলো, বেশ ইজি ফিল করতে শুরু করলাম। বেশ সাবলীলভাবেই উত্তর দিলাম, না। ম্যারিড। দুটো মেয়েও আছে।
Ñএকটা কথা বলব?
Ñবল।
Ñএধরনের লিফট দিতে রাজি হওয়া মানে কিন্তু আমরা ধরে নিই, আপনি রাজি।
এবার মেয়েটার দিকে ভালোভাবে আবার তাকালাম। কেমন অ্যাট্রাকশান বোধ করছি। ঠিক এই পেশার মেয়ে মনে হচ্ছে না। আসলে এই পেশা ঠিক কোন উচ্চতায় পৌঁছেছে, সে সম্পর্কে বোধহয় আমার কোনো ধারণাই নেই। কিংবা হয়তো কলেজ, ইউনিভার্সিটির মেয়েরা সত্যি সত্যিই এই পেশায় নেমেছে। হয়তো ড্রাগ কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজন।
সবকিছু ছাপিয়ে কেন যেন ‘যা হওয়ার হবে’ টাইপ একটা ডেসপারেশান আমাকে পেয়ে বসল। কেন যেন মেয়েটার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। খেলা যখন শুরু হয়েই গেছে, শেষ পর্যন্তই দেখি। গল্প পাব কি না জানি না, তবে একটা অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্সের লোভ পেয়ে বসল। বললাম, পরিচিত কোনো জায়গা আছে? আই মিন সিকিউরড। যেখানে গেলে কেউ জানবে না।
মেয়েটা আড় চোখে তাকাল। আঁচ করার চেষ্টা করছে আমাকে। চোখে কিছুটা সন্দেহ। কিছুটা দ্বিধাও আছে। আমিই সম্ভবত এরকম প্রথম ক্ল্যায়েন্ট না। হয়তো এর আগেও অনেকে এভাবে ভুল করেছে। হয়তো সেসব মানুষের জন্য ওর নির্দিষ্ট একটা ফর্মুলাও আছে। হয়তো ভাবছে কি করবে। নেমে যেতে চাইবে? আজকের রাতের ইনকামটা মাটি করবে? নাকি ফেরত গিয়ে আরেকবার ট্রাই করবে? খুব বেশিদূর আসিনি, এখনও ফিরে গিয়ে ট্রাই করলে ভালো কিছু জুটে যেতে পারে। একসময় দ্বিধা কাটিয়ে বলেই ফেলল, আমাকে বরং নামিয়ে দিন।
চার
Ñবসো।
Ñএটা কার বাসা?
Ñএটা আমাদের অফিসের গেস্ট হাউজ।
মেয়েটা বেশ অবাক চোখে চারিদিক দেখছে। ধানমন্ডির এই বাসাটা অফিস থেকেই ভাড়া নেওয়া। বাইরের শহরের কোনো ব্রাঞ্চের বড় কোনো অফিসার আসলে, থাকতে পারে। এছাড়াও মাঝে মাঝে ঘরোয়া আড্ডা হয়। আজকের দিনে এমন কিছুর কোনো সম্ভাবনা নেই। আজকে কমবেশি সব জিএমই এখন ক্লান্ত। সারাদিনের ধকল শেষে এখন বাসার দিকে ছুটছে।
তারপরও কেয়ারটেকারকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম। ও জানালো, ‘কেউ নেই, পুরো ফাঁকা’।
Ñআপনি সিওর?
Ñকি ব্যাপারে?
Ñকোনো সমস্যায় পড়বেন না তো?
Ñআশা করছি না।
Ñআপনার কেয়ারটেকারের চোখ কিন্তু তা বলছে না। আমার প্রতি বেশ বিরক্ত মনে হচ্ছে। আই ডাউট…
Ñচান্স কম, ও জানে তেমনটা করলে, চাকরি যাবে। তারপরও, সে চান্সও নেওয়া যাবে না। ওর মুখ বন্ধ করতে হবে।
Ñতবে বন্ধু বান্ধবদের কাছে হয়তো বলবে।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : আশিক রহমান