চামড়ার ট্রেডিং বা প্রসেসিংয়ের জন্য একদিনও সময় নয়
কোরবানির স্থান নির্ধারণ, পশুর বর্জ্য অপসারণ, হাটের নিরাপত্তা, পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানোর ব্যবস্থা এবং কোরবানির পশুর চামড়ারক্ষাসহ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা জরুরি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য গত ৫ সেপ্টেম্বর মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদের সভাপতিত্বে আমরা চামড়া ব্যবসায়ী, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সতর্কবার্তা দেন এই বলে, চামড়ার দাম নির্ধারণ অযৌক্তিক হলে চামড়া বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোরবানির চামড়া পাচার করা পরের ব্যাপার, বরং প্রথমেই আসে চামড়া রক্ষা করার বিষয়টি। কোরবানির চামড়া আমরা রক্ষা এবং সংরক্ষণ করব কিভাবে, কেমন করে, কাদের মাধ্যমে? প্রশ্নগুলো করতে হচ্ছে কারণ এর কারণগুলো সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা আছেÑ
১. হাজারীবাগের ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর না হওয়ায় অনেক ট্যানারি এবার ব্যাংকঋণ পাবে না। মাংস ব্যবসায়ী, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেননি। চামড়ার প্রাথমিক বাজারে পুঁজি স্বল্পতা এর অন্যতম কারণ।
২. চামড়া রক্ষায় লবণের মূল্য বর্তমানে অনেক বেশি। একটি গরু-মহিষের চামড়া রক্ষা করতে তিন থেকে চার-পাঁচশত টাকার লবণ প্রয়োজন হয়। ছাগল-ভেড়ার চামড়ায় বিশ-ত্রিশ টাকার লবণ লাগে। চামড়া থেকে মাংস ছাড়ানো ও লবণ দেওয়ার জন্য গরু-মহিষ প্রতি কারিগরকে দিতে হয় ৫০-৬০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য দিতে হয় ৬-৭ টাকা। বিক্রয় করতে পোস্তার আড়ৎদারকে দিতে হয় গরু-মহিষ প্রতি ৭০-১০০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে পরিবহণ ব্যয়, কুলি ইত্যাদি খরচ। কোরবানির গরুর চামড়া গড়ে ২২-২৩ ফুট এবং ছাগল-ভেড়া ৪.৫-৪.৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য হয়। যদি ১৫ টাকা লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে তবে চামড়া রক্ষা করবে কে? আড়ৎদার, লবণ, কুলি, পরিবহণ খরচ প্রতি ছাগলের চামড়ায় ৫০-৫২ টাকা, বিক্রয় করতে হবে ৭০ টাকা। কোরবানিদাতাকে কয় টাকা দিয়ে আমি চামড়া কিনব এবং আমি কত টাকা লাভ করব? কেন আমি রপ্তানির তিন নম্বর স্থান অর্জনকারী চামড়া রক্ষা করব সেই প্রশ্ন থেকেই যাবে, ১৯৭২ সালে লবণের জন্য চামড়া ফেলে দিতে হয়েছিল। তার ওপর আশঙ্কা থাকবে চামড়া রক্ষা করে চামড়া বিক্রয় করব কার কাছে? নগদ টাকায় চামড়া কিনবে কে? ট্যানারি তো সবগুলো সচল নয়। যারা সচল আছে তাদের কাছেও টাকা নেই। সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের অযুহাতে ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। তবু আশার বাণী, ৪০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০টি ট্যানারির কাজ চলছে। তারাও টাকা পরিশোধ করেনি। ব্যাংক তাদেরকে লোন দেয়নি। আর যে সমস্ত ট্যানারি হেমায়েতপুরে যেতে পারবে না তারা তো ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়ার ও বেপারিদের দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা পুঁজি সরিয়ে নিয়েছে, আর দিন গুনছে কবে ট্যানারি হেমায়েতপুরে যাবে এবং হাজারীবাগের ট্যানারির জমি বিক্রয় করে ভাগ-বাটোয়ারা করবে। তারা জানে আমরা আর চামড়ার ব্যবসা করতে পারব না। যে কয়দিন বাহানা করে সরকার ও জনগণকে বোকা বানিয়ে হাজারীবাগে থাকা যায়।
যে কারণে আমাকে বলতে হচ্ছে, কোরবানির চামড়ার কী হবে? বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে একটি প্রশ্ন ছিল, হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেওয়ার জন্য ৩ মাস সময় চেয়েছেন। আমার অনুরোধ তিন মাস কেন, তিন বছর সময় দেওয়া হোক চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে। কিন্তু চামড়া ট্রেডিং ও প্রসেসিং করার জন্য একদিনও সময় দেওয়া যাবে না। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, সরকারের স্বার্থে পরিবেশ রক্ষায় হাইকোর্ট অনেক কিছু দেখিয়েছে। আদালতের একটি নির্দেশ আছে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এমন কোনো নির্দেশ দিবেন না যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। ৪০টি ট্যানারি চালু করতে পারলে রপ্তানির কোনো ক্ষতি হবে না।
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন