বসবাস ভারতে, পড়াশোনা বাংলাদেশে
মাছুম বিল্লাহ : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া গ্রাম নিচাগোবিন্দপুর। সীমান্তঘেঁষা গ্রামটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। এ গ্রামের সব বাসিন্দাই জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তারা পড়াশোনা করে বাংলাদেশে। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট লাগোয়া এ গ্রামটির কাছাকাছি কোনো স্কুল না থাকায় এখানকার ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগই পড়াশোনা করতে আসে দিনাজপুরের বিরামপুর কাটলা ও চ-ীপুরের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায়।
কলকাতার বৈকালিক দৈনিক এবেলা শুক্রবার এ খবর দিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশে পড়াশোনা করার কারণে ভারতীয় এসব ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’কে নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে জানে। তাদের স্বদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন. . .’ ভুলে গেছে।’
এবেলা জানায়, এখানকার বাসিন্দাদের সকলেই জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। বড়দের সকলের রয়েছে রেশনকার্ড ও সচিত্র পরিচয়পত্র। কিন্তু সেই নাগরিকত্বের কদর শুধু নির্বাচনের সময়। ওরা জানেন, ভোটাধিকারের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের জামাই আদর আর প্রতিশ্রুতি আসলে মিছে স্বপ্ন দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। তাই স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও ভারতের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য চালু সাক্ষরতাসহ সব প্রকল্প থেকে বঞ্চিত ভারত ভূখ-ের এ গ্রামের মানুষ। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে। জাতীয় সঙ্গীতের কথা জিজ্ঞেস করলেই ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি. . .’ শুনিয়ে দেয় তারা।
এবেলার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন হিলি ব্লকের ধলপাড়া পঞ্চায়েতের এ গ্রামটির শিশুদের শিক্ষার উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ সেভাবে নেয়নি বলে অভিযোগ। স্বাধীনতার ৫৮ বছর পর ২০০৫ সাল নাগাদ নিচাগোবিন্দপুর গ্রামে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছিল। কিন্তু তার পর আর কেউ খোঁজখবর নেয়নি। সেই সময়ে স্কুলটির নিজস্ব কোনো বাড়ি না থাকায় গ্রামের মধ্যে বাঁশঝাড়ের নিচে বসেই বাচ্চারা লেখাপড়া শিখত। কচিকাঁচাদের অসহায় অবস্থা দেখে গ্রামেরই আফাজ মোল্লা স্কুল তৈরির জন্য জমিও দান করেছিলেন। বছর তিনেক আগে ধলপাড়া পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সেই জমিতে স্কুল বিল্ডিং তৈরি হয়। সেই বিল্ডিং-এ পঠনপাঠন শুরুও হয়। কিন্তু শিক্ষকরা কোনো সাম্মানিক না-পাওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে তা বন্ধও হয়ে যায়। এর পর আর কিছু করেনি প্রশাসন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা জানিয়েছেন, স্কুলের অভাবে শিশুরা বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে যায়Ñ এমন খবর তার জানা নেই। তবে তিনি জানিয়েছেন, নিচাগোবিন্দপুর গ্রামে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি কেন বন্ধ হয়ে রয়েছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি তা পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেবেন।