শতাধিক ভুয়া অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা
বিপ্লব বিশ্বাস : জাল কাগজপত্র দিয়ে তৈরি (বর্তমানে বাতিলকৃত) শতাধিক অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা করবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। যারা পাসপোর্ট নিয়েছেন, তারাতো আসামি হবেনই যারা এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত তদন্তে তাদের নাম বেরিয়ে এলে তারাও আসামি হবেন।
বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩-এর ১১(খ) ধারা মোতাবেক আলাদাভাবে এসব মামলা করা হবে। বিষয়টি সম্পর্কে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শতাধিক পাসপোর্টধারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত নিবিড়ভাবে মামলা তদারকি করবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। অধিদফতরের একজন কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাতিলকৃত শতাধিক পাসপোর্ট প্রথমে সাধারণ এমআরপি হিসেবে দেয়া হয়েছিল। পরে জাল কাগজপত্র দিয়ে সংশোধনের নামে সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ‘অফিসিয়াল পাসপোর্ট’-এ রূপান্তর করা হয়। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত একটি শক্তশালী চক্র পাসপোর্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এ ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করে। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য মোটা অংকের অর্থ লেনদেন হয়। প্রতিটি জাল পাসপোর্ট ফরম পরীক্ষা করে এক্সপার্টরা দেখেছেন, সব ফরম একই হাতে লেখা। বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩-এ ১১(খ) ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ আদেশ অনুসারে পাসপোর্ট বা ভ্রমণ দলিল সংগ্রহ করার জন্য জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য দেবে বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় গোপন করবে বা আইনসম্মত ক্ষমতা ছাড়া পাসপোর্ট বা ভ্রমণ দলিলে লিখিত কিছু পরিবর্তন করবে বা করার চেষ্টা করবে বা অন্যের দ্বারা পরিবর্তন করাবেÑ এমন অপরাধের শাস্তি ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদের কারাদ- অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সরকারি আদেশ জালিয়াতি করে অফিসিয়াল পাসপোর্ট নেয়ার ঘটনা ঘটে। তুরস্ক দূতাবাস থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানোর পর জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়। বিষয়টি জানাজানির পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে। তাদের প্রতিবেদনে পরিচালকসহ আটজনের জড়িত থাকার তথ্য মেলে। এরপর পাসপোর্ট অধিদফতর এ ঘটনা তদন্তে গত বছরের ১৭ মে পরিচালক সেলিনা বানুকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই সেলিনা বানুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর যুগ্মসচিব ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রকল্প (ভবন নির্মাণ) পরিচালক আতিকুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নতুন কমিটি করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনেই জাল পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওইসব দেশে যাওয়ার পর বিমানবন্দরেই (অনঅ্যারাইভাল ভিসা) ভিসা পেয়ে থাকেন। মানবপাচারকারীরা এই সুযোগ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের সরকারি কর্মকর্তা বানিয়ে বিদেশে পাচার করছেন। বিশেষ করে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে অনেক লোককে অফিসিয়াল পাসপোর্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়। অনেকেই ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা সেজে প্রথমে তুরস্ক, পরে সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যান। এভাবে তিন বেকার যুবক সরকারি কর্মকর্তা সেজে তুরস্কে গিয়ে বিপদে পড়েন। পরে তারা সেখানকার পুলিশকে জানালে সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। তুরস্ক সরকার বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায়। এরপর জাল পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট পরিচালক মুনশি মুয়ীদ ইকরাম, সহকারী পরিচালক এসএম শাহজামান, উচ্চমান সহকারী সাইফুল ইসলাম-১ এবং মো. শাহজাহান মিয়া ও আবুল হোসেন সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া/মানবপাচার এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সংশ্লিষ্টতাসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১২টি নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এমআরপি রি-ইস্যুর আবেদন গ্রহণের সময় আবেদনকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ও দেশের সব চেকপোস্টে সব সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর মধ্যে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য তাদের ডাটাবেজ করতে হবে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম