ইসহাক নয়, কুরবানির আদেশ হয় ইসমাইলকে নিয়ে
হুমায়ুন আইয়ুব: আল্লাহর আদেশে হযরত ইব্রাহীম আ. তার কোন পুত্রকে কুরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন? ইসমাইল আ.কে, নাকি ইসহাক আ.কে? অনেকের দাবি, শিশু ইসহাককে কুরবানি করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন হযরত ইব্রাহীম আ.। কিন্তু এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই। মূলত বড়পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি, ছোট পুত্র ইসহাক সম্পর্কে নয়। এটিই অকাট্য সত্য। কুরআন করীম দ্বারা তাই প্রমাণিত এবং এর উপরই বিশেষজ্ঞ-মনীষীদের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ছোট পুত্র ইসহাককে কুরবানি করার আদেশ করা হয়েছিল এ কথা যে ভুল তা কয়েকভাবে প্রমাণিত হয়। কুরআন মজিদের ৩৭তম সূরা ‘আসসাফফাত’ এ জবেহ (কুরবানি)-এর ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তারা পরস্পর বলল, ‘ইব্রাহীমের জন্য একটি অগ্নিকু- প্রস্তুত কর এবং তাঁকে সে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর। মোটকথা তারা ইব্রাহীমের অনিষ্ট করার ইচ্ছা করল। সুতরাং আমি তাদেরকে অধঃপতিত করে দিলাম এবং ইব্রাহীম বললেন, ‘আমি তো আমার রবের দিকে ফিরে যাচ্ছি, তিনি আমাকে (উত্তম স্থানে) পৌঁছে দিবেনই।’ (তিনি দুআ করলেন,) হে আমার রŸ! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে একজন ধৈর্য্যশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অনন্ত যখন পুত্রটি তাঁর সাথে চলাফেরা করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন তিনি বললেন, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। অতএব, তুমিও চিন্তা কর, তোমার কী মত?’ তিনি বললেন, ‘আব্বাজান! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পূর্ণ করুন, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’
ফলে যখন তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন এবং আমি তাঁকে ডেকে বললাম, ‘হে ইব্রাহীম! নিশ্চয়ই আপনি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন।’ আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি। প্রকৃতপক্ষেও তা ছিল একটি বড় পরীক্ষা। আর আমি তার পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ জবেহের পশু দান করলাম। এবং আমি তাঁর জন্য পশ্চাতে আগমনকারীদের মধ্যে এই বাক্য থাকতে দিলাম যে, ‘ইব্রাহীমের প্রতি সালাম হোক।’ আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি আমার ঈমানদার বান্দাগণের অন্যতম ছিলেন। আর আমি তাঁকে (পুত্র) ইসহাকের সুসংবাদ প্রদান করলাম যিনি নবী, (এবং) সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর আমি ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি বরকত নাজিল করেছি এবং তাঁদের উভয়ের বংশে অনেক নেক লোকও রয়েছে এবং অনেকে এমনও রয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের ক্ষতি সাধন করছে।’ সূরা সাফফাত : ৯৭-১১৩
আয়াতসমূহে যে সকল বিষয় লক্ষ্য করা দরকার। ১. সুরা সাফফাত এর উপরোক্ত আয়াতসমূহে ইব্রাহীম আ.-এর দু’জন সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং (ধৈর্য্যশীল একটি পুত্রসন্তান) বলে উল্লেখ করে তার কুরবানির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের সুসংবাদ নামসহ দেওয়া হয়েছে, এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, ইব্রাহীম আ.-এর মাত্র দুজন পুত্রসন্তান ছিলেন, ইসমাইল ও ইসহাক। সুতরাং একজন অর্থাৎ ইসহাক আ. এর উল্লেখ নামসহ হলে অপরজনÑ যাকে একজন ধৈর্য্যশীল পুত্রসন্তান আখ্যা দিয়ে তার কুরবানির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তিনি ইসমাইল আ. ছাড়া আর কে হবেন?
লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, দোয়া ব্যতীত যে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তার নাম ইসহাক। সূরা হুদ (১১:৭১)-এ তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আর সূরা সাফফাতে (৩৭: ১০০-১০১) এ কথা সুস্পষ্ট যে, কুরবানির ঘটনা যে পুত্রের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে তার সুসংবাদ ইব্রাহীম আ. এর দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং তা ইসহাকের নয়, ইসমাইলের ঘটনা।
মোটকথা, কুরআন মজিদের উল্লেখিত আয়াতসমূহ এবং বর্ণনাভঙ্গি দ্বারা অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানির ঘটনা ইসহাক আ. এর সাথে নয়; বরং ইব্রাহীম আ.-এর অপর পুত্র ইসমাইল আ.-এর সাথেই সংঘটিত হয়েছে। সম্পাদনা: মোরশেদ