ক্লায়েন্ট
মেয়েটার দিকে তাকালাম। ওর উদ্বেগটা নিখাদ। সত্যিই আমার জন্য ভাবছে। ধীরে ধীরে আমরা নিচের তলার ড্রইং রুমটার দিকে এগিয়ে গেলাম। ডুপ্লেক্স টাইপ বাসা। ওপর তলায় বেডরুম। নিচে ডাইনিং, কিচেন আর বড় একটা ড্রইং রুম। ড্রইং রুমের সোফায় বসতে বসতে ওকে আশ্বস্ত করলাম।
Ñআই থিংক, ওটাও বন্ধ করা যাবে। স্টিল, রিস্ক থাকবে। পাশের বাড়ির লোকজন, মোড়ের দোকানদার, অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছে। বাট রিস্কটা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
Ñআমাকে নামিয়ে দিতে পারতেন।
হ্যাঁ, তা পারতাম। কিন্তু করিনি। কেন? হয়তো নিজেই জানি না। অ্যাট্রাকশান ফিল করছি? গল্প খোঁজাটা কি বাহানা? নতুন এক্সপেরিয়েন্সের শখ? সেসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাতত দরকার মেয়েটাকে আশ্বস্ত করা। ওর ভিতরে মনে হয় একটা অপরাধবোধ জাগছে। সেটা থামানো দরকার। প্রসঙ্গ চেঞ্জ করলাম
Ñদেখ, বুঝতেই তো পারছ, এটা আমার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স। কিছু ব্যাপার কিন্তু আমার জানা নেই।
মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কি প্রসঙ্গে কথাটা বললাম বোঝার চেষ্টা করছে। কেয়ারটেকার কিভাবে ম্যানেজ করব এই ব্যাপারে উপদেশ চাইছি? নাকি তার ব্যাপারে ইঙ্গিতে কিছু বলতে চাইছি? কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল,
Ñযেমন?
Ñএই যেমন, তোমাদের খাওয়া অফার করতে হয় কিনা? আই মিন কখন খেয়েছ?
মেয়েটা হেসে ফেলল। বেশ সুন্দর হাসি। এরপর দুষ্টামি ভরা চোখে তাকাল
Ñকৃপণরা খাওয়ায় না। তবে অনেকেই খাওয়ায়। বিশেষ করে পুরো রাতের ক্লায়েন্টরা। ড্রিঙ্কও করায়, কখনও ড্রিঙ্ক করতে জোরও করে।
মেয়েটা কনফিউস করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে স্মার্টনেস দেখাচ্ছে, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, খোঁচা দিচ্ছে। তবে ওর হাসিতে সত্যিই একটা যাদু আছে। আলাপে একটা সহজতা আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়াও কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। অপরাধবোধ ব্যাপারটা সরে যাচ্ছে। দুজনেরই। পরিস্থিতির এই স্বাভাবিক হওয়াটা ধরে রাখতে হবে। তবে আরও একটা ব্যাপার ঘটতে শুরু করেছে। আই অ্যাম রিয়েলি ফিলিং ইন্টারেস্টেড। গল্প করতে ভালো লাগছে। হয়তো ওর সাবলীলতা কিংবা হতে পারে ওর সৌন্দর্য। কেমন একটা ভালোলাগা অনুভূতি হতে লাগল।
Ñআমি যদিও কৃপণ, বাট, আমার নিজেরও খাওয়া হয়নি, তাই খাবার আনাবো। আর তোমাকে খেতে না দিয়ে শুধু শুধু সামনে বসিয়ে রাখতে বিবেকে লাগবে।
মেয়েটার চোখে দুষ্টুমির হাসি। আমার দিকে বেশ খানিকক্ষণ তাকাল। চোখ নাচিয়ে জানতে চাইলাম ‘কি ব্যাপার?’ মেয়েটা মাথা দুদিকে নেড়ে বোঝাল ‘কিছু না’। এরপরে কেয়ারটেকারকে খবার আনতে দিলাম। আমি নিজেও ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ওকেও জানালাম ফ্রেশ হতে চাইলে, যেতে পারে। জানালো প্রয়োজন নেই। বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলাম, দেরি হবে। সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে বললাম। প্রীতি অবশ্য নালিশের সুরে কিছু বলতে যাচ্ছিল, ওকে থামালাম। ‘বাসায় এসে কথা হবে।’ এরপরে ড্রয়িং রুমটা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম। অফিসের গেস্ট হাউজ হলেও, এখানে খুব একটা আসা হয়নি। তাসের আড্ডায় মাঝে মাঝে এসেছি, ভালো লাগেনি। সেলফে কিছু বই আছে। ধীরে ধীরে ওদিকে গিয়ে একটা বই বের করে পাতা উল্টাতে লাগলাম।
Ñএকটা কথা বলব?
মেয়েটা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্য করিনি। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই বললাম
Ñনা। খাওয়া শেষ হোক তারপরে বল। আর হ্যাঁ পেট ভরেই খেও। তোমার পেমেন্ট থেকে কাটা যাবে না।
মেয়েটা হাসছে। এমন সময় কেয়ারটেকার এসে জানাল খাবার টেবিলে লাগিয়ে দিয়েছে। দুজন খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম।
Ñবসুন। আমি সার্ভ করছি।
Ñহাসছ কেন?
Ñখাওয়া শেষ হোক, তারপরে বলব। (চলবে)
সম্পাদনা: আশিক রহমান