পবিত্র হজ আজ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
আমিন ইকবাল : আজ রোববার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক।’ অর্থাৎÑ ‘আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ আমি উপস্থিত, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনটিকে মূল হজের দিন মনে করা হয়। ৯ জিলহজ হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন। বাংলাদেশে ৮ জিলহজের তারিখটি সৌদি আরবে ৯ জিলহজ। সেই হিসাবে আজ রোববার হজ পালিত হবে। তালবিয়া পাঠের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। হজ ভিসা নিয়ে যারা সৌদি আরব গিয়ে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হবে। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ।
নিয়মানুযায়ী গতকাল (বাংলাদেশ সময়) ফজর থেকে আজ ফজরের নামাজ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান শেষে হাজিরা আরাফাতের ময়দানে রওনা হওয়ার কথা। আরাফাতে আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিরা অবস্থান করবেন। সেখানে হজের খুতবা শুনবেন। জোহর এবং আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন। আরাফাতে সারাদিন কাটাবেন খোলা আকাশের নিচে। তারপর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালিফাতেও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। সেখান থেকে জামারায় শয়তানকে মারার জন্য পাথর (কংকর) সংগ্রহ করবেন।
১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে হাজিরা আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় হাজিদের চারটি কাজ থাকে। তা হচ্ছেÑ পশু কুরবানি করা, মাথা মু-ন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও ইহরাম খোলা। এ আহকামের অংশ হিসেবে হাজিরা মিনায় গিয়ে ১০ জিলহজ কুরবানি করবেন এবং মাথা মু-ন বা চুল ছাঁটবেন। এছাড়া বাকি দুটি কাজও করবেন। এরপর মক্কায় পবিত্র কাবাঘর তওয়াফ এবং সা’ঈ করবেন। এ তাওয়াফের নাম বিদায়ী তওয়াফ। এর আগে সৌদি আরব গিয়েই হজযাত্রীরা প্রথমে একবার অবশ্যই পবিত্র কাবাঘর তওয়াফ করেন। বিদায়ী তওয়াফ সেরে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে প্রতিদিন তিন শয়তানকে পাথর মারবেন। এভাবে সম্পন্ন হবে হজের গোটা আনুষ্ঠানিকতা।
প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়াল্লিম কার্যালয় থেকে গাইডের মাধ্যমে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে গমন, অবস্থান, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কুরবানির নিয়মকানুন সবকিছু আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ পুলিশ, আধা-সামরিক ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। হাজিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনায় কিছু দূর পরপর রয়েছে হাসপাতাল। রয়েছে মোয়াচ্ছাসা, দমকল বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য। হাজিরা পথ হারিয়ে ফেললে স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউট ও হজকর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট (তাঁবুতে) গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয় সূত্র জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনামূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে। সকাল থেকে সারাদিন হেলিকপ্টার মিনার চারপাশ টহল দেয়।
এবার বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে হজ পালনে মক্কায় সমবেত হয়েছেন ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৫২০ জন মুসলমান। সৌদি সংবাদপত্র সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্পাদনা: মোরশেদ