নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন আফগান পিতা-পুত্র শত্রু থেকে মিত্র, তারপর…
পরাগ মাঝি : বেশ কয়েকবার একে অপরকে মেরে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে গত মাসেই আফগানিস্তানের সরকারি মিলিশিয়া বাহিনীর কমান্ডার আবুল বাশার ও তার ছেলে তালিবান যোদ্ধা সাইদ মোহাম্মদের মধ্যে ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে, এটা স্পষ্ট ছিল যে, এর শেষ এখানেই নয়। পিতা-পুত্রের এক দশকের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের শুভ সমাপ্তি ঘটলেও তা যে একপক্ষকে সুখী করবে না, এটা স্পষ্ট। কারণ পিতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুত্রও তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে রাজি হয়েছিল।
এতে যা হওয়ার তাই হলো। গত বুধবার আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য ফারিয়াবের কায়সার জেলায় আরও দশজন যোদ্ধার সঙ্গে বাশার ও তার ছেলে সাইদ তালেবান যোদ্ধাদের ফাঁদে পড়ে গেল। প্রায় ঘণ্টাখানেক দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর বাশার তার পাঁচ যোদ্ধাসহ প্রাণ হারায়।
বাশারের পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ফারিয়াব রাজ্যসভার সদস্য আব্দুল বাকি হাসমি বলেন, ‘তালিবানরা নিহতদের ট্যাংকের পেছনে বেঁধে প্রায় ১০ কিলোমিটার টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়।’
স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় পরে মৃতদেহগুলোকে কায়সার জেলার কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়; যেখানে বাশার বাড়ি বানিয়েছিলেন। বাশারের শরীরে সাতটি গুলি পাওয়া যায়। যার একটি মাথার পেছন দিক দিয়ে ঢুকেছিল।
তাদের জানাজায় যারা অংশ নেবে তাদের নিজ গাঁয়ে ফিরতে দেওয়া হবে না; তালেবানের পক্ষ থেকে এমন ষোষণা আসার পরও পুলিশপ্রধানসহ প্রায় ২ হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়, পুলিশপ্রধান কায়সারি ঘোষণা দিয়েছেন যে, এ হত্যাকা-ের ঘটনাটি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। হত্যাকা-ে বাশারের ছেলে জড়িত কি না তা খুঁজে দেখা হবে।
১৯৯০-এর দশকে বাশারের প্রধান শত্রু ছিলেন মৌলভী হাফিজ। আমেরিকার সেনা অভিযানের সময় যে কি-না তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি কায়সারে এসে ইমামতি করে সাধারণ জীবন-যাপন শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে এসময় তিনি বাশারের ছেলে সাইদকে মগজধোলাই করে তালেবান যোদ্ধা বানান এবং বাবাকে হত্যা করার জন্যও বেশ কবার তাকে অভিযানে পাঠান।
অনেকেই ধারণা করছেন, বাশার হত্যায় তার পুত্রের হাত থাকতে পারে। তবে, পুলিশপ্রধান ঘনাটি নিয়ে নানা গুজব ছড়ানোর বিষয়টিকে তুলে ধরেন।
আর বাশারের পরিবারের শুভাকাক্সক্ষী হাসেমি বলেন, বাশারের মৃত্যু আসন্ন এমনটি আগেই বুঝেছিলাম। সে যুদ্ধ করতে ভালবাসতো।
তিনি আরও বলেন, বাশারের ছেলে এখন বলছে- ‘আমি প্রতিশোধ নেবো।’ এর মানে এই নয় যে, সে এমনটি সত্যিই করতে পারবে। সে হয়তো দু-একজন তালেবানকে হত্যা করবে, তালেবানরাও হত্যা করবে এ পক্ষের কাউকে। বাবার দুর্ভাগ্য এবার যেন আমি ছেলের মধ্যেও দেখতে পারছি। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম