কুরবানির ঈদ, অন্য রকম রান্না
কোরবানির ঈদে রসনার তৃপ্তির জুড়ি নেই। সবাই চায় কোরবানির গরুর কিংবা খাসির মাংসের নানা পদে অতিথি আপ্যায়ন করতে। রোস্ট, রেজালা, কোরমা তো ঈদে রান্না হবেই। এর বাইরেও ভিন্ন কিছু পদ রাঁধতে পারেন। শুধু কি তাই কোরবানির মাংসের পাশাপাশি কলিজা, মগজ, ভুড়ি এমনকি গরুর ট্যাং দিয়েও অনেকেই মজাদার খাবার তৈরি করে। দেখে নিন কোরবানির মাংসের নানা পদের কিছু রেসিপি।
নবাবী বিরিয়ানি
উপকরণ: বাসমতি চাল ১ কেজি, খাসির মাংস ২ কেজি, টকদই ১ কাপ, আদা-রসুন পেস্ট ১ টেবিল চামচ+১ টেবিল চামচ, জিরা পেস্ট ১ টেবিল চামচ, পোস্ত পেস্ট ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, কাজুবাদাম পেস্ট ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া আধা টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গরম মসলা পরিমাণ মতো, বিরিয়ানি পা. ১ টেবিল চামচ, চিকেন স্টক ২ কাপ, মুসাম্বির রস ১ কাপ, মাওয়া গুঁড়া আধা কাপ, কিসমিস, আমন্ড বাদাম, পেস্তা আধা কাপ করে, চিনি ১ চা-চামচ, ঘি দেড় কাপ, লবণ পরিমাণ মতো, মিষ্টি আতর চার ভাগের এক চা-চামচ।
প্রণালী: চাল ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। খাসির মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে দই, আদা, রসুন লবণ মেখে ১ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে, বড় সসপ্যানে অর্ধেক ঘি দিয়ে পেঁয়াজ ও অর্ধেক গরম মসলা দিয়ে মাংস ও অন্যান্য মসলা দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। মাংস সিদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ঝোল থেকে মাংস তুলে নিতে হবে। অন্য সসপ্যানে বাফি ঘি দিয়ে বাদাম, কিসমিস ভেজে তুলতে হবে। তারপর চাল দিয়ে কষিয়ে বাফি গরম মসলা, ঝোল, চিকেন স্টক, লবণ ও প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে পোলাও রান্না করতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে চাল ফুটে আসতে মাংস, বিরিয়ানি পা., বাদাম, কিসমিস, চিনি, মুসাম্বির রস দিয়ে দমে বসাতে হবে ১০ মিনিট। এরপর মিষ্টি আতর ছড়িয়ে দিয়ে নামাতে হবে।
শিক কাবাব
উপকরণ: গরুর মাংস (আন্ডার কার্ট চর্বি ছাড়া) ১ কেজি, আদার রস ৪ টেবিল চামচ, রসুন পেস্ট ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, টকদই আধা কাপ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, শাজিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মিক্স হার্ব ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, অলিভ অয়েল আধা কাপ, নাশপতি ২টি+মধু আধা কাপ ও লবণ পরিমাণ মতো।
প্রণালী: মিক্স হার্ব, লেবুর রস, অলিভ অয়েল, নাশপতি ছাড়া বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে ৭-৮ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর শিকে গেঁথে নিতে হবে। বাকি উপকরণ একসঙ্গে মেখে সম্পূর্ণ একটা মিশ্রণ করতে হবে। এই মিশ্রণ ব্রাশ করে শিকের মাংসে দিতে হবে। কাঠ-কয়লার আগুন করে শিককাবাব ছেঁকতে হবে। মাংস সিদ্ধ হয়ে হালকা পোড়া ভাব এলে নামিয়ে মিশ্রণটা ওপরে ঢেলে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
বিফ কলিজা ভুনা
উপকরণ: বিফ কলিজা ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কিউব করে কাটা ১ কাপ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, এলাচ ২টি, দারুচিনি ১ টুকরা, তেজপাতা ২টি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী ও তেল পরিমাণ মতো।
প্রণালী: প্রথমে কলিজা গরম পানিতে অল্প সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিন। অবশেষে গরম অবস্থায় কলিজার পাতলা পর্দাগুলো হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নিন। অবশেষে ছোট ছোট টুকরা করুন। ভালো করে আবার ধুয়ে নিন। তেল গরম করুন। এতে পেঁয়াজ, গরম মসলা এবং তেজপাতা দিয়ে ভাজুন। অন্য সব বাটা মসলা এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মসলা ভালো করে কষিয়ে নিন। মসলা কষাণো হলে এতে কলিজা দিয়ে আবার ভুনা ভুনা করে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন ১০ মিনিট। এরপর ধনেপাতা কুচি, কাঁচামরিচ ও জিরা গুঁড়া দিয়ে ভুনা ভুনা করে নামিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন বিফ কলিজা ভুনা।
থাই ঢঙে কলিজা ভাজি
উপকরণ: কলিজা টুকরা ৪ কাপ, আদার গুঁড়া ১ চা-চামচ, রসুন গুঁড়া দেড় টেবিল চামচ, পেঁয়াজ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লেমন গ্রাস গুঁড়া ১ চা-চামচ, ফিশ সস ২ টেবিল চামচ, লাইট সয়া সস ২ টেবিল চামচ, ডার্ক সুইট সয়া সস সিকি কাপ, তিলের তেল বা সেসেমি অয়েল প্রয়োজনমতো, গোলমরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ, ভাজার জন্য সেসেমি অয়েল প্রয়োজন মতো।
প্রণালী: কলিজা বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিন। ফ্রাইপ্যানে সেসেমি তেল গরম করে কলিজা টুকরাগুলো ছেড়ে দিন। মিনিট খানেক পর উল্টে দিন। আরও মিনিট খানেক নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন।
সুইট সয়া সস না খেতে চাইলে ডার্ক সয়া সসের সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ ঝোলাগুড় মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
মগজ ভর্তা
উপকরণ: মগজ ১টি, কাঁচামরিচের কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, ধনেপাতার কুচি পৌনে এক কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, লবণ ও হলুদ প্রয়োজন মতো।
প্রণালী: মগজ অল্প হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে চটকে নিন। পাত্রে পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা, সরিষার তেল ও লবণ দিয়ে চটকে নিন। এবার মগজ মিশিয়ে ভালো করে মেখে পরিবেশন করুন।
ভুড়ি বিলাস: ভুড়ি ভুনা
গোস্তের চেয়ে নাকি মজা বেশি গরুর ভুড়িতে। তাই ভুরিভোজীদের জন্য এই রেসিপি
উপকরণ: ভুড়ি ১ কেজি, পেয়াজ কুচি ২/৩ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা গুড়ো ১ টেবিল চামচ, হলুদ ১ চা-চামচ, মরিচ গুড়ো ১ চা-চামচ, দারুচিনি ৩/৪ টুকরা, তেজপাতা ২টি, এলাচ ৪/৫টি, আস্ত শুকনো মরিচ ৩/৪টা, মেথি অল্প কয়েকটা লবণ ও তেল পরিমাণ মতো।
প্রণালী: প্রথমে ভুড়ি পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে অল্প লবণ আর হলুদ যোগে ঘণ্টাখানেক সিদ্ধ করে নিন। প্রেসার কুকারে গরম করলে অবশ্য আরও কম সময় লাগবে। ভুড়ি সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে পানি ঝড়িয়ে রাখুন। একটি কড়াই বা প্যানে তেল দিন। তেল গরম হলে শুকনো মরিচ, এলাচ, দারুচিনি ও মেথি দিয়ে একটু নেড়ে পেয়াজ ও লবণ দিন। পেয়াজ লালচে হয়ে এলে আধ কাপ পানি দিয়ে বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষাণ। মসলা ভালো করে কষিয়ে ভুড়ির টুকরো দিয়ে দিন। অল্প আঁচে ঢেকে দিন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিবেন। পেঁয়াজ গলে গিয়ে মাখা মাখা হয়ে তেল উপরে উঠে আসলে নামিয়ে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
সতর্কীকরণ: মজার সঙ্গে গরুর ভুড়ির উপকারি দিক যেমন আছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। তাই যারা গরুর ভুড়ি খেতে পছন্দ করেন তাদের বলছিÑ খাওয়ার আগে খুবই ভালোভাবে লাইম ওয়াটার দিয়ে পরিষ্কার করে এবং ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। কারণ গরুর শরীরের এই অংশ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। এ ছাড়া ১০০ গ্রাম ভুড়িতে থাকে ৪ গ্রাম ফ্যাট এবং ১৫৭ মিগ্রা কোলেস্টেরল। তাই হার্টের রোগীর জন্য এই খাদ্যটি মোটেই নিরাপদ নয়। গ্রন্থনা: মাহাদী হাসান