ক্লায়েন্ট পাঁচ.
খাবার টেবিলে তেমন কোনো কথা হলো না। কেয়ারটেকার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। ‘কিছু লাগবে কিনা’ এমন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও, আড় চোখে মেয়েটাকে দেখছে। চোখে রাগ না ঘৃণা বোঝা যাচ্ছে না।
খাওয়া শেষ হলো। মেয়েটা ড্রইং রুমের দিকেই যাচ্ছিল। ওকে ডাকলাম
Ñচল।
Ñকোথায়?
Ñদোতলায়, ব্যালকনিতে।
বলে দোতলায় উঠতে শুরু করলাম। মেয়েটাও প্রথমটায় কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে পেছন ফিরে দেখলাম, ও হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাতের ইশারায় ডাকলাম, ওপরে আসবার জন্য। ডুপ্লেক্স বাসাটার দোতলায় একটা বেশ সুন্দর ব্যালকনি আছে। এখানে আসলে, আমি সাধারনত ব্যালকনিতে একা একা বসে থাকি। আজকেও ইচ্ছা করছে, ওখানে বসেই গল্প করি। মেয়েটা সিঁড়ির নিচেই দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চাইল,
Ñমানে?
এরপরে হয়তো বুঝল, ওপরে উঠতে বলছি। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসতে লাগল। ব্যালকনিতে একটা ছোট্ট টেবিল আর চারটে চেয়ার আছে। এদিকে ওদিকে কিছু ফুলের টব। বেশ রোমান্টিক পরিবেশ। আমি ব্যালকনিতে রাখা একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। ধীরে ধীরে মেয়েটা ব্যালকনিতে এসে আমার সামনের দাঁড়াল।
Ñকিছুক্ষণ আগে তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে। বল। সেটা শুনব।
মেয়েটাকে এবার প্রথমবারের মতো কনফিউসড লাগল। একবার আমার দিকে তাকাল। এরপরে অনেকটা স্বগতোক্তির মতো করে বলল,
Ñখুব জরুরি কিছু না।
Ñতা হয়তো। তারপরও, শুনব। আসলে এখানে আমি একটা সিগারেট খাব। একা একা বসে থাকার চেয়ে বরং দুইজন গল্প করি।
বেশ অনিচ্ছা নিয়েই মেয়েটা এসে বসল। ব্যালকনিটা বেশ বড়। একটা ছোট টেবিল আর চেয়ারগুলো ছাড়া আর তেমন কোনো ফার্নিচার নেই। একেবারে রেলিং ঘেঁষে কিছু ফুলের টব। বাকি পুরো জায়গায় ইচ্ছে করলে পায়চারি করা যায়। ঠিক আমার সামনের চেয়ারটায়, আমার মুখোমুখি বসল। একটা সিগারেট ধরালাম।
Ñব্যাড ম্যানার্স
অবাক হলাম। ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাতেই ইশারায় সিগারেটটা দেখাল। অপরাধ মেনে নিলাম। বেনসনের প্যাকেটটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। সেখান থেকে একটা বের করল। লাইটারটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। ও ধরাতে যাচ্ছিল এমন সময় নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,
Ñএক কাপ চাপ হলে বেশ ভালো লাগত, না?
Ñবানাব?
Ñলোভ হচ্ছে। বাট আই থিংক কেয়ারটেকার উইল ডু ইট।
Ñআমার বানানো খেতে খারাপ লাগবে?
ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে ক্ষান্ত দিলাম। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম।
Ñওকে। বানাতে পারো। কিচেনে সবকিছুই থাকার কথা। আমি বরং কেয়ারটেকারকে ডাকছি, ও দেখিয়ে দিবে।
Ñলাগবে না। আমি খুঁজে নেব।
Ñআমি হেল্প করব?
Ñনিজের বাড়িতেও হেল্প করেন?
বেশ কাটা কাটা কথা বলে তো মেয়েটা। শ্লেষ? নাকি আমার ফ্রেন্ডলি হওয়ার চেষ্টাটা যে ভ-ামি, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল? অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সময়টা কেন যেন উপভোগ করতে শুরু করেছি। ওকে সঙ্গে নিয়ে কিচেনে গেলাম। দক্ষ হাতে খুব দ্রুত কিচেন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে ফেলল। দ্রুত স্টোভ জ্বালিয়ে চায়ের পানি বসিয়ে দিল।
Ñশিখবেন?
Ñআপত্তি নেই।
Ñযেহেতু কিছুটা পানি ভেপার হবে, তাই যতটা চা খাবেন তার চেয়ে কিছু বেশি পানি দিবেন। এরপরে চা দেওয়ার অনেকগুলো ফর্মুলা আছে। কেউ পানি ফুটতে শুরু করলে দেয়, কেউ আগেই দেয়।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মেয়েটাকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। কেমন ঘরোয়া একটা ফিলিং দিচ্ছে।
Ñচা পাতা দেওয়া ডিপেন্ড করে, আপনি কতটা স্ট্রং খাওয়া পছন্দ করেন। কতটা স্ট্রং খান জানেন? না বউ করে দেয়, আর আপানি খান।
Ñঅনেকটা সেরকমই।
Ñচিনি কতটা খান? নাকি সেটাও জানেন না?
এই মেয়ে ভোগাবে। কিভাবে মেয়েটার আসল গল্প বের করব, এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি। আসলে নিজেকে কেমন যেন নিয়তির ওপর ছেড়ে দিয়েছি। মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে। একটা খুব সুন্দর গল্প পাব। (চলবে)
সম্পাদনা: আশিক রহমান