বিএনপি কি নির্বাসনে যাবে?
তারিকুল হক
দেশ অনেক ভালো চলছে। যারা সমালোচক তারা সমালোচনা করবেই। কিছু সমস্যা তো থাকবেই, সবখানেই আছেÑ সব দেশেই। বাংলাদেশ অনেক বেশি ন্যায়ের শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের চার দশক পরও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। আইনের এ শাসনের ধারাটি যদি অব্যাহত থাকে, দেশ আরও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে যাবে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সহিষ্ণুতা দেখায় বলেই অনেকে অনেক ধরনের কথা বলতে পারছেন। টকশোতে সরকারের কঠোর সমালোচনা। এটা ছিল কি কখনও আগে? আবার অনেকে বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেই আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছি। আমি উল্টাটা বলতে চাই। একটি লোকের অপরাধ, প্রাপ্য শাস্তি, সেটি যখন নিশ্চিত হচ্ছে, তখন কী করে তা প্রতিহিংসা হয়। বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা বলে তার অপরাধকে তারা হালকা করে ফেলতে চায়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে যদি তারেক রহমানকে ধরতে চাই তাহলে বিএনপি থেকে বলা হবে এটা রাজনৈতিক কারণে। কিছুদিন আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে উনি সংশয় আছে। বিশ্বের অন্য কোথাও যারা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, সেখানে বিরোধী রাজনীতিকবৃন্দ এমন প্রতিষ্ঠিত বিষয়ে কথা বললে রাজনীতি করতে পারতেন? কিন্তু বাংলাদেশে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংস্কৃতি আরও বেশি। আমরা অনেক কিছু মঞ্জুর করি, যেটা মঞ্জুর করা ঠিক নয়।
বিএনপি এখন একরকম কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা তাদের রাজনীতিহীনতার কারণেই হয়েছে বলে আমার মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিএনপিকে শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চাই। চাই এ কারণে, আমার প্রতিপক্ষ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে আমার ক্ষমতা একাধিকার হয়। দেশে যদি আমার ক্ষমতা এককভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আমিতো স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবোই। আর এটা আমার দলের জন্যও খারাপ এবং নিজের জন্যও খারাপ। তাই একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চাই। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির অবস্থা এতই নাজুক যে তাদের দুর্বল বলতেও দ্বিধা হয়। বিএনপিকে বুঝতে হবে, ষড়যন্ত্র নয় জনগণের রাজনীতি করেই এগিয়ে যেতে হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বয়কট করল। জামায়াতের কথায় তাদের নির্বাচনে না আসা কতটা সুফল বয়ে এনেছে তা তারা নিজেরাই দেখুক।
বঙ্গবন্ধু ৭০ সালে নির্বাচন করেছিলেন। পাকিস্তানি ফ্রেমওয়ার্কের মাঝেই নির্বাচন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা বোঝা গিয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেই স্বশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, ভোট দিয়ে স্বাধীন হয়নি। ভোট না হলে বঙ্গবন্ধু যে জনগণের সমর্থন পেয়েছিলেন, সেটা বুঝতেন, বোঝাতেন কিভাবে।
গণতন্ত্র ব্যাপক চর্চার ফল, এটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। তাই গণতন্ত্র নিয়ে বিএনপিকে অধিক চর্চার মধ্যে থাকতে হবে। গণতন্ত্রের মনন তৈরি করতে হলে প্রত্যাহিক চর্চা প্রয়োজন। এটা এমন নয়, কেউ এসে বিএনপিকে ক্ষমতা হাতে তুলে দিবে। জনগণ থেকে বিএনপি যতই দূরে যাবে, বুঝতে হবেÑ তাদের নির্বাসন অনিবার্য। গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করলে হবে না। বিএনপিকে নিজেদের ভিতরে এবং বাইরে সবখানে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে, তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হবে।
পরিচিতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক ভিপি চাকসু
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন