পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাট্টা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র
নূসরাত জাহান: জঙ্গিবাদ দমন ইস্যুতে এক সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়। ওই সয়ম ভারতের সঙ্গে তাদের কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। তবে ২৬/১১ এবং পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে শুরু করে। এখন তা তলানিতে এসে ঠেকেছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ নিয়ে বেশ সরব ভারত। এ ইস্যুতে সম্প্রতি জি-২০ ও আসিয়ান সম্মেলনে পাকিস্তানকে এক হাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জানিয়ে দিল, জঙ্গি দমনে কোনো বাছাবাছি চলবে না। প্রতিবেশী দেশে হামলা চালাচ্ছে এমন কোনো গোষ্ঠী পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়তে চাইলে তাদেরই বিনাশ করতে হবে। সূত্র: বিবিসি।
জি-২০ সম্মেলনে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে মোদি বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশই সন্ত্রাসের এজেন্টদের ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ তার মতে, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় তিন স্তরেই সন্ত্রাস ও মৌলবাদকে ছড়াচ্ছে ওই দেশটি। এটা রুখতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
ভিয়েতনামে আসিয়ান বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৈঠক করেন মোদির সঙ্গে। জঙ্গিবাদ দমন প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সব জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে ইসলামাবাদকে চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান অল্প কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তবে ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে মদত দেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। যুক্তরাষ্ট্র সেই অভিযোগকে মাথায় রেখে পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কূটনীতিকদের মতে, মার্কিন চাপ সত্ত্বেও লস্কর, জয়শ বা হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এখনই পাকিস্তানের পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদি শপথ নেওয়ার আগেই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন থেকেই নওয়াব শরিফ সরকারের সঙ্গে মোদি প্রশাসনের ভালো সময় শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের সময় দিল্লির সব দাবি মেনে নিয়েছিলেন নওয়াজ। কূটনীতিকদের মতে, ভারতের জন্য কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর এমন টান বিরল। তার প্রতিদানও দিয়েছে ভারত। তাইতো আফগানিস্তান থেকে ফেরার পথে নওয়াজের আমন্ত্রণে প্রটোকল ভেঙে লাহোরে ছুটে গিয়েছিলেন মোদি।
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তান-ভারতবিরোধী গোষ্ঠী ভালোভাবে নেয়নি। বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। রাজনৈতিকভাবে দুর্বল নওয়াজকে কোণঠাসা করতে শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। শরিফ কাশ্মীরকে অবহেলা করছেন বলেও অভিযোগ করেন বিরোধীরা। ফলে অস্তিত্ব রক্ষা করতেই সুর চড়াতে থাকেন শরিফ।
কূটনীতিকদের মতে, মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানির পর কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কার্যত নজিরবিহীন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান। যে নওয়াজ দিল্লির দাবি মেনে আলোচনা করছিলেন, তিনিই কাশ্মীরকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলছেন। তার বক্তব্যের পাল্টা হিসাবে আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের মুখোশ খুলতে উদ্যোগী হয়েছে দিল্লিও। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানবিরোধী কড়া বার্তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন বার্তার পর এটাই স্পষ্ট যে, জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে একটু বেকায়দায় আছে পাকিস্তান। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি