ঈদে শেষ বেলায় ঘরে ফেরা যাত্রীদের পিছু ছাড়েনি দুর্ভোগ
আনিসুর রহমান তপন: রাত পোহালেই মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহা। এটি মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। তাই চলছে শেষ মুহূর্তে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি। ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি ছুটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই নাড়ির টানে ঘরে ফেরা শুরু করে ঢাকাবাসী। এতে ঈদ যাত্রার প্রথম দিন থেকেই মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীর চাপে দুর্ভোগ ভোগান্তিতে পড়ে সবাই।
এদিকে গতকাল রোববারও ছিল না এর ব্যতিক্রম। প্রথম দিকে শুধু সড়ক পথের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়লেও গতকাল ভোগান্তিতে পরে রেলযাত্রীরা। কাছাকাছি সময়ে ঢাকা থেকে সিলেট ও খুলনাগামী দুটি ট্রেনের কারিগরি সমস্যার কারণে বিপর্যয়ে পড়ে রেলের সিডিউল। ফলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো আটকে থাকে টঙ্গী স্টেশনের আগে। এ কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সকালে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যাওয়ায় সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল কমলাপুর রেলস্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা আরও বেশকিছু আন্তঃনগর ট্রেনের। গতকাল রোববার সকাল ৭টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পরেই বিমানবন্দর স্টেশনে বিপর্যয়ে পরে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পারাবত এক্সপ্রেস। এ ট্রেনের দুটি কোচের (কোচ নং ১০২৩ ও ১০১১) এয়ার প্রেসার ব্রেক আউট হয়ে যাওয়ার কারণে সিডিউল সমস্যা শুরু হয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন এক্সপ্রেসও বিমানবন্দর স্টেশনের আগে খিলক্ষেতে একই সমস্যায় আটকে যায়। এতে প্রায় আড়াইঘণ্টা আটকে থাকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা সব ট্রেন। ফলে কমলাপুর রেলস্টেশনে দুর্ভোগে পরে হাজার হাজার ট্রেনযাত্রী। আর দুটি ট্রেনের কারিগরি সমস্যার কারণে সকালে অন্তত ১১টি ট্রেনের সময়সূচিতে কয়েকঘণ্টার বিলম্ব হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সকালে পারাবতের পিছনেই আটকে থাকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা সোনারবাংলা এক্সপ্রেস। আর তেজগাঁও স্টেশনে বসে থাকে তিস্তা এক্সপ্রেস।
এছাড়া রাজশাহীর ধুমকেতু এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতী, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের মহুয়া এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জের ঈদ স্পেশাল, গাজীপুরের জয়দেবপুর এক্সপ্রেস, জামালপুরের তারাকান্দির অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসকে সকালে কমলাপুর স্টেশনে বসে থাকতে হয়।
এর মধ্যে সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ে বেলা সোয়া ১২টায়, সকাল ১০টার একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে বেলা পৌনে ১২টায়।
এর মধ্যে ধুমকেতু আগের দিনও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছাড়ে। গতকাল এ ট্রেন ভোর ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৭টার আগে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছতে পারেনি। পরে এটি প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ১০টা ৪০মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যায়। আর আটকে থাকার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পারাবত এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস দুটির ‘এয়ার প্রেসার ব্রেক’ ঠিক করে দেওয়ার পর ফের ছেড়ে যেতে শুরু করে অন্যান্য ট্রেন।
জামাল দেওয়ান নামে এক যাত্রী জানান, যে পরিমাণ গাড়ির চাপ সে অনুযায়ী ফেরি ঘাট থেকে ছাড়ছে না। লোড হতে অনেক সময় লাগছে, আবার ভিআইপি গাড়ি সিরিয়াল ভেঙে আগে যেতে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ফেরি পারাপারে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি আদায় করছে তারা।
এছাড়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মহাসড়ক টাঙ্গাইল মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর (রোড), হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কে সকাল থেকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে অনেক গাড়ি সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুর নাগাদ বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় পৌঁছতে পেরেছে। ঢাকা থেকে আসা যাত্রী আমিনুল ইসলাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে যানজটের কারণে প্রচ- গরমে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। নাবিল পরিবহনের চালক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ৫ মিনিট ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে পারলেও ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় থানার ওসি মো. আফাবুর রহমান জানান, ভোর ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার হাতিয়া এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ছয় জন আহত হয়। যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবাইকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক এশরাজুল হক জানান, গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সকাল থেকে বেড়েছে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে পশুবাহী ট্রাকও আগের তুলনায় বেশি আসছে। ফলে গোড়াই থেকে মির্জাপুরের পাকুল্লা পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলছে থেমে থেমে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে রোববারও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের ভোগড়া থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। একই সময় ভোগড়া বাইপাস থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা যায়।
সম্পাদনা:আজাদ হোসেন সুমন