টঙ্গীর বিস্ফোরণ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ৯, ছুটি ৩ জনের, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ জনের
রিকু আমির: টঙ্গীর টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ৯জন শ্রমিক চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে পাঁচজন ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে ও বাকিরা পর্যবেক্ষণ কক্ষে আছেন।
গতকাল দেখা গেছে, ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে আছেন- প্রাণ কৃষ্ণ, ফেরদৌস, শাহীন আলম ও জাকির হোসেন। অন্যদিকে, কামরুল নামের আরেকজন শ্রমিক শঙ্কামুক্ত হওয়ায় তাকে ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড থেকে রোববার সকালে ছুটি দিয়েছে হাসপাতাল।
পর্যবেক্ষণ কক্ষে রয়েছে- সিলেট বিয়ানীবাজারের আমিনুল হক রিজু, আনোয়ার আলম, মাগুরার শিপন, বরিশালের মোহাম্মদ রোকন ও জাহাঙ্গীর। এর মধ্যে রিজু, শিপন ও জাহাঙ্গীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রোববার দুপুরে আমিনুল হক রিজুকে পাওয়া গেছে অজ্ঞান অবস্থায়। কিছুক্ষণ পর পর হাত-পা নাড়াচাড়া করছিলেন। কিন্তু এসব তার জ্ঞাতসারে হচ্ছিল না।
তার বড় ভাই হাসানুল হক মিজু এ প্রতিবেদককে জানান, রিজু মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। হাসপাতালে আনার আগ থেকে এখন পর্যন্ত তার অবস্থার উন্নতি নেই। ইতোমধ্যে সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। রিজুর সহকর্মীদের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন, রিজু তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
পর্যবেক্ষণ কক্ষে থাকা আনোয়ার আলমের জ্ঞান ফিরে শনিবার রাত ২টায় বলে জানান তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ঈদের সময় ডাক্তার না থাকা নিয়ে।
মাথাসহ দেহের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত মাগুরার শিপনের জ্ঞান গতকাল রাত পর্যন্ত ফিরেনি। মাথাসহ দেহের বিভিন্নস্থান ব্যান্ডেজে মোড়ানো রয়েছে তার।
শিপনের স্বজন নিগার সুলতানা এ প্রতিবেদককে জানান, ডাক্তাররা বলেছেন, মুখে খাবার দিতে। কিন্তু যার জ্ঞানই ফিরেনি, তাকে খাবার দিবেন কিভাবে?
পর্যবেক্ষণ কক্ষে থাকা রোকনের চেতনা থাকলেও কথা বলতে পারেন না। তার মাথায়ও গুরুতর আঘাত রয়েছে। নড়তে-চড়তেও পারেন না।
তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, কিছু বুঝতে পারতাছি না। উনার অবস্থার কোনো উন্নতি চোখে পড়ে না।
পর্যবেক্ষণ কক্ষে থাকা জাহাঙ্গীরের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক। দেখা গেছে, শয্যায় শোয়া জাহাঙ্গীরকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর সুঠাম দেহের অধিকারী, সংজ্ঞাহীন জাহাঙ্গীর জোরেসোরে নড়েচড়ে উঠেন। তার সঙ্গে থাকা তিনজন স্বজন তাকে চেপে ধরে রাখেন। তিনিও মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত।
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে দিলীপ চন্দ্র দাস ও রাসেল খানকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি আরও জানান, তাদের অবস্থা ভাল, কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই। বর্তমানে এই ইউনিটে টঙ্গীর কোনো রোগী নেই বলে জানান তিনি।
ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের অধীনে যেসব রোগী আছেন, তাদের অবস্থা একটু জটিল। বিশেষ করে পর্যবেক্ষণ কক্ষে যারা আছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনকই। তারা ঠিক হবেন, কিন্তু সময় লাগবে, মাথায় আঘাত বলে কথা। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম