টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় আগুন আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ধোঁয়াশা আরও চারজনের লাশ উদ্ধার
সুজন কৈরী ও নাঈমুল হাসান, টঙ্গী প্রতিনিধি: ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েল কারাখানার আগুন। আজও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে কারাখানায় অগ্নিকা-ের সূত্রপাত নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। বয়লার পরিদর্শন কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে গ্যাস থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা বললেও তা মানতে নারাজ গ্যাস সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ তিতাস। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও বয়লার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল ওই কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ২৯ জন কারখানার শ্রমিক প্রাণ হারালেন। অপরদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে তাদের স্বজনরা কারখানার সামনে অপেক্ষা করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, গত শনিবার এ অগ্নিকা-ের পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছে। কিন্তু কিছুতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে কারখানার কিছু অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ওই অংশগুলোতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। আর যেসব অংশে আগুন লেগেছে বা ধোঁয়া বের হচ্ছে, সেগুলো নেভানোর কাজ চলছে। আগুন নেভাতে আরও সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী কালকের (আজ) মধ্যে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি। ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কারখানাটিতে বিভিন্ন কেমিক্যালের ড্রাম রয়েছে। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছে। এছাড়া ভবনটিও অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে এই ভবনে প্রবেশ করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আজ (গতকাল) বিকাল থেকে আমরা উদ্ধারকাজ শুরু করেছি। কারখানার মূল ভবনের পূর্ব পাশে একটি রাস্তার পাশে ধসে পড়া ভবনটির অংশবিশেষ থেকে আরও চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছ। এছাড়া মোট ৩৪ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের ভিতরে আরও মানুষ আছে কি নেই তা স্তূপ না সরালে জানা যাবে না।
এদিকে গতকাল সকালে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা পরিদর্শন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক শরাফত আলী। এ সময় তিনি বলেন, অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয় গ্যাস কন্ট্রোল বক্স থেকে। বয়লার কক্ষ অক্ষত আছে। সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বয়লার রুম থেকে অ্যাক্সিডেন্ট হলে ঘরটাই আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহেতু বয়লারের ভিতরে যেতে পারলাম না, আপনারা গেলেও হয়তো দেখতে পাবেন। আমি যতদূর শুনলাম যে বয়লারটা এখনো অক্ষত আছে, বয়লার রুম থেকে কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি। যতদূর শুনেছি যে, গ্যাস রুম থেকে অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে। তিনি বলেন, কারখানার দুটি বয়লার ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।
তবে বয়লার পরিদর্শকের এমন বক্তব্যের পর তিতাস গ্যাসের টঙ্গীর আঞ্চলিক বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অজিত চন্দ্র দেব সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস লাইনের কোনো ত্রুটি থাকার তথ্য তাদের কাছে ছিল না। তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে। অপরদিকে গতকাল বিকালে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) মো.আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই ওই বয়লার স্থাপন করা হয়েছে।
ধসেপড়া ভবনটির পূর্বপাশের অংশের স্তূপ থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই সড়কটিতে সবসময় অসংখ্য রিকশা থাকে। ঘটনার সময় এই সড়কে এক রিকশাচালক ও দুই যাত্রী নিহত হয়েছে। তাদের উপর ভবনের দুটি ছাদ ও এরিয়া দেয়ালের অংশ ধসে পড়েছিল।
কারখানার ভবনে সবই ছিল দাহ্য পদার্থ : ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় দাহ্য পদার্থের আধিক্য ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দীন আহমদ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ঘটনায় নিহত রিপন দাসের পরিবারকে সাহায্য দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন। এর আগে রিপন দাস বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গাজীপুর জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। তিনি জানান, নিহতদের শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। ঈদের পর তালিকা করে এ টাকা হস্তান্তর করা হবে। কারখানায় আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আমরা এখনো পাইনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বয়লার বিস্ফোরণ বা ভবনের অবৈধ গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণে হতে পারে। ভবন ধসেপড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভবনটি অনেক পুরনো হওয়ায় সহজে ভেঙে পড়েছে।
এদিকে গতকাল রাতে লে. কর্নেল শফিউল আজম নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য যান। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম