প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রপ্তানি ও সামাজিক নিরাপত্তায় এগিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের দৃষ্টান্ত
জাফর আহমদ: আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন এক সময়ের শাসক পাকিস্তানের জন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। এতোদিন বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে খোদ পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও বলা শুরু হয়েছে। প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রপ্তানি ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে বাংলাদেশ।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেদেশে ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ কাজ উদ্বোধনকালে বলেন, তাদের বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার সবেমাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামীতে পর্যায়ক্রমে ৭ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অন্যদিকে ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। মাঝে মাঝে রাজনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হলেও চলমান আছে স্থিতিশীলতা। এ কারণে আর্থ-সামাজিক খাতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বুধবার পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামি সে কথাই বলেছে। ভারত নয়, বাংলাদেশই তাদের ভয়ের কারণ। এ ভয় পাকিস্তানের জন্য যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, তেমনি কৌশলগত।
এ ব্যাপারে বিআইডিএস-এর গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত বলেন, স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের পাট রপ্তানি করে পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নয়ন করা হয়েছে। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাঙালি নিজেদের সৃজনশীলতা দেখিয়ে উন্নয়ন করছে। পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সম্ভাবনা থাকার পরও পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারছে না। জঙ্গিবাদের কাছে হার মানছে।
বৈশ্বিক মন্দা, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম অংশীদার মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যেও বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংেশর উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বিদায়ী বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যা উপমহাদেশে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বিশ্বের অনেক দেশের পক্ষেই ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশের রিজার্ভ সঞ্চায়নের হার ছাড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিজার্ভ তিন মাসের বৈদেশিক বাণিজ্য মেটানোর সমান থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের সঞ্চায়ন দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। খাদ্য নিরাপত্তায় অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের রিজার্ভ সেখানে মাত্র ২৩ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার। এ রেকর্ড পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে এ অঞ্চলের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খাদ্য জোগাড় করা যেত না। ৬০ ভাগ খাদ্য বাইরে থেকে আমদানি করা হত। এখন ১৬ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করে খাদ্য উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। বিদেশে রপ্তানিও করছে।
রপ্তানির ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের যেখানে মোট রপ্তানি ২৮ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের তা ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর ইব্রাহিম খালেদ বলেন, পাকিস্তান আমলে বাঙালিকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এরপর চার দশকে পাকিস্তানের চেয়ে ৬ বিলিয়ন বেশি রপ্তানিকারক দেশ। এটা বাংলাদেশের মানুষের বুুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও স্বকীয়তার প্রমাণ।
সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এগিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস’ প্রজেক্টের চতুর্থ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সামাজিক নিরাপত্তায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২ দশমিক ১০৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১ দশমিক ৪২২ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে ভুটান (অবস্থান ১৬)। এরপর ৭৬তম স্থানে আছে নেপাল। শ্রীলংকার অবস্থান ১০৫ এবং ১৫৪তম স্থান নিয়ে সূচকে সবার চেয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী