জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও সংবর্ধনা ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তার সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভাষণ দেবেন এবং একই দিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা দেবেন। সংবর্ধনা সভাটি অনুষ্ঠিত হবে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের বল রুমে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে যোগদান করবেন।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে লিডার্স সামিট অন রিফিউজি-তে যোগ দেবেন। এসময় তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে অবস্থান নেয়া ১০ মিলিয়ন শরণার্থীর বিষয়টি উল্লেখ করে শরণার্থীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করবেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ।
নিউইয়র্ক থেকে এনা জানায়, মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীর পুরো কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, আগামী ১৮-২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করতে কানাডা থেকে নিউইয়র্ক আসছেন। তিনি নিউইয়র্র্কের লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টে অবতরণ করবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৭০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অং সান সূচির সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, একাধিক কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। প্রথমত. বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে ইউরোপে চলমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট ও অভিবাসন সমস্যা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে অন্যান্য দেশে লাখ লাখ আশ্রয় প্রত্যাশীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো এবারের অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে। অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বের আগে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে জাতিসংঘের উদ্যোগে ইউনাইটেড নেশন্স সামিট অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস-এর অয়োজন করা হয়েছে। একে কেন্দ্র করে উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের পুরোটা সময় জুড়েই অসংখ্য নীতিনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয়ত. মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গি তৎপরতার উত্থান এবং প্যারিস, ব্রাসেলস, ইস্তাম্বুল, বাগদাদ, মদিনা, জাভা, পুচং এমনকি ঢাকাসহ পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের আওতায় আরও কার্যকর প্রয়াস গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সচেষ্ট হবেন।
তৃতীয়ত. গত বছরের শেষ দিকে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অন্যতম শর্ত হিসেবে বিশ্বের ৫৫টি দেশ এই চুক্তিটি অনুসমর্থন করলে তা কার্যকারিতা লাভ করবে। এবারের অধিবেশনকালে বাংলাদেশসহ বেশকিছু সদস্য রাষ্ট্র এই চুক্তিটি অনুসমর্থন করবে।
চতুর্থত. একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিময় পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে গত বছর জাতিসংঘের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ ছাড়াও বেশকিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চাভিলাষী ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সংবলিত ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট-এর চূড়ান্ত অনুমোদন, উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা গ্রহণ, বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের জন্য সেন্ডি ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন অনুমোদন এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার প্রয়াসে প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটেরিয়ান সামিটের আয়োজন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে উল্লেখযোগ্য এই কর্মপরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও প্রাথমিক অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন।
১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউনাইটেড নেশন্স সামিট অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্যান্ট-এর প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখবেন। বাংলাদেশ বর্তমানে অভিবাসন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বৈশ্বিক ফোরামের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এবং এ বছরের ডিসেম্বরে এর নবম বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
একই সামিটের অংশ হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেনের সঙ্গে বিশ্বশান্তি ও রিফিউজি সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল সেশনে যৌথ-সভাপতিত্ব করবেন।
২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় হাই লেভেল প্যানেল অন ওয়াটার-এর একটি বিশেষ বৈঠকে এই প্যানেলের একজন মনোনীত সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, গত ২১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডার পানি সম্পদের প্রাপ্যতা ও ব্যবস্থাপনা এবং সকলের জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ‘প্যারিস চুক্তি’-তে পানি সম্পর্কিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এই প্যানেলটি গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, মরিশাস, মেক্সিকো, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল ও তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এই প্যানেলে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে লিডার্স সামিট অন রিফিউজি-তে যোগ দেবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন ইন স্কেলিং আপ ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি’ শীর্ষক একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ বৈঠকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেনের উদ্যোগে গ্লোবাল ডিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী টেকসই শিল্পায়ন, শোভন ও যথোচিত কর্ম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন। সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল যোগ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।