যৌনাঙ্গ থেকে ওষুধ হাড় ও দাঁত থেকে ক্যাপসুলেরর কভার ‘কুরবানির পশুর বর্জ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২শ’ কোটি টাকা’
আজাদ হোসেন সুমন : কুরবানির পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে এবার বৈদেশিক মুদ্রা প্রায় ২শ কোটি আয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম। তিনি প্রায় দেড়যুগ ধরে এই সেক্টর নিয়ে কাজ করছেন। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি সরকারের সহায়তার আবেদন জানিয়ে তিনি ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন কিন্তু অদ্যাবধি কোনো সাড়া পাননি। তবুও ব্যক্তিগত ও সমিতির উদ্যোগে নির্ভৃতে কাজ করে চলেছেন। দেশের অবহেলিত অথচ সম্ভাবনাময় এই শিল্প নিয়ে তার মতে, গরুর হার শিং, যৌনাঙ্গ, ভুঁরি, রক্ত, দাঁতসহ কোনোকিছুই ফেলনা নয়, বরং এগুলো বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোনার মত দামি। গতকাল বুধবার সকালে আমাদের অর্থনীতিকে তিনি জানান, কুরবানির ঈদ সামনে রেখে এবারও প্রায় এক হাজার মণ পশুর হাড় সংগ্রহ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চীন, জাপান থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে ২শ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৭০ কোটি টাকার পশুর বর্জ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আনুমানিক ৫৫ লাখ গরু ও মহিষ এবং ৩০-৩৫ লাখ ছাগল কুরবানি হয়ে থাকতে পারে। গত বছর কুরবানির গরু-মহিষের সংখ্যা ছিল ৫৭ লাখ। সংখ্যায় কম হলেও বিভিন্ন পর্যায়ের প্রক্রিয়া শেষে গতবারের মতোই এক হাজার মণ হাড়সহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনে গরু-মহিষের যৌনাঙ্গ অত্যন্ত দামি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে একেকটি যৌনাঙ্গ ৬-৭ ডলারেও বিক্রি হয়। গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে ক্যাপসুলের কভার তৈরি হয়। ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া জুতার সোল এবং প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। রক্ত থেকে তৈরি হয় মুরগি ও পাখির খাবার। রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও জব মিলিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে দানাদার খাবার তৈরি করা হয় মুরগি ও পাখির জন্য। চর্বি দিয়ে সাবান তৈরি হয়। শিং থেকে আগে অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরি হতো। এখন এর চাহিদা কমে যাওয়ায় শিং থেকে বোতাম ও চিরুনি বেশি তৈরি হয়। মহিষের শিংয়ের ডগা থেকে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানে এই নাড়িভুঁরি দিয়ে ‘শোস্যাট রোল’ নামে এক ধরনের খাবার বানানো হয়। এই খাবার জাপানে বেশ জনপ্রিয়।
এদেশে বর্জ্য যা ফেলে দেওয়া হয়-সে ফেলে দেওয়া বর্জ্যই যে মূল্যবান সম্পদ হতে পারে সেটা দেশের মানুষকে জানিয়েছেন চিনিয়েছেন হাতেগোনা ক’জন মানুষ রবিউল আলম তাদের অন্যতম। উদ্যোক্তারা শত চেষ্টা করেও সরকারের সাড়া এখনো পাননি। তারা হতাশও নন। অপার সম্ভাবনাময় এ সেক্টরের সাড়া আজ না কাল সরকার দিবে। প্রত্যয় ও প্রতাশা নিয়ে নিভৃতেই এ সেক্টরে কাজ করে চলেছেন রবিউল আলমসহ কিছু দৃঢ়চেতা মানুষ। সম্পাদনা : রফিক আহমেদ