ঢাকার দুই মেয়রের সংবাদ সম্মেলন কুরবানির ‘বর্জ্যমুক্ত’ রাজধানী
ফয়সাল খান : ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই রাজধানীকে কুরবানির পশুর বর্জ্যমুক্ত করেছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকার দুই মেয়র। গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন নিজ নিজ নগর ভবনে আয়োজিত পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে দুই মেয়র জানান, দক্ষিণ সিটিতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৯ হাজার ৮ টন ও উত্তর সিটিতে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭ হাজার ৮০১.২ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। তবে ঈদের তৃতীয় দিন কিছু কিছু এলাকায় কুরবানি করায় বর্জ্য থাকতে পারে বলে স্বীকার করেন তারা।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এ কৃতিত্ব নগরবাসীর। ঈদের দিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় পরিচ্ছন্ন কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরবাসীর সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নকর্মী থেকে শুরু করে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে কুরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এ বছর বর্জ্য অপসারণে করপোরেশনের নিজস্ব যন্ত্রপাতির সাথে সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও ওয়াসার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করাসহ নিজস্ব ১২টি পে-লোডার, ৭টি টায়ার ডোজার, ৫৩টি ডাম্পার, ৪টি ট্রেইলর, ২টি প্রাইম মোভার, ২টি ব্যাকহো লোডার ব্যবহার করা হয় বলে জানান দক্ষিণের মেয়র। এছাড়া পরিচ্ছন্ন কাজে ১২৫টি খোলা ট্রাক, ৮৫টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি কম্পেক্টর, নিয়মিত ৩২৫টি কন্টেইনারসহ অতিরিক্ত আরও ৪০টি কন্টেইনার বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈদের নামাজের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ৫টি করে এবং ৮টি ইউনিয়নে ৪০টিসহ মোট ৩২৫টি স্থানে প্যান্ডেল নির্মাণ করার কথা উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, পশু কুরবানির জন্যও আলাদাভাবে ৩২৫টি স্থানে বৃষ্টি প্রতিরোধক ত্রিপলসহ সামিয়ানা ও ব্যানার টানানো ও বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই লক্ষ বিশ হাজার ব্যাগ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ১ হাজার লিটার জীবাণুুনাশক তরল (স্যাভলন) ও ৩০ (ত্রিশ) টন বি¬চিং পাউডার নগরীর বিভিন্ন সড়ক, গলিতে ছিটানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ঈদের দিন দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরুর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই বেশিরভাগ ওয়ার্ডের প্রায় সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানান ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত আমিনবাজারের ল্যান্ডফিলে প্রায় ৭ হাজার ৮ শ ২ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয় বলে জানান তিনি। ঢাকা উত্তরে ছোট-বড় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫টি পশু কুরবানি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কোনো ওয়ার্ডে ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কুরবানি নির্ধারিত স্থানেই করা হয়েছে, তবে সব ওয়ার্ডের চিত্র এক রকম নয়। ৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে নির্ধারিত স্থানে বেশি কুরবানি হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল দুপুরে ডিএনসিসি নগরভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক বলেন, কুরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণে ডিএনসিসির ৩৪০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োজিত ছিলেন। বর্জ্য অপসারণের সুবিধার্থে কাউন্সিলররা বিনামূল্যে ২ লাখ পলিব্যাগ নাগরিকদের কাছে সরবরাহ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের যান্ত্রিক বহরের ১৩০টি আধুনিক বর্জ্যবাহী ট্রাক, ১৬টি ডাম্পার, ৮টি পে-লোডার, ৩টি টায়ার ডোজার, ১টি প্রাইম মুভার, ২টি ট্রেইলর, ১টি এক্সিভেটর ও ৩টি চেইন ডোজার দিনরাত কাজ করেছে। আরও ৭০টি ট্রাক, ৬টি ডাম্পার, ২টি এক্সিভেটর, ১টি চেইনডোজার ও ১টি প্রাইম মুভার ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। পশুর হাট এবং কুরবানিকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণের পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে ডিএনসিসির পানির গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নৌবাহিনী থেকে প্রাপ্ত ৭টি পানিবাহী গাড়ি ঈদের দিন সকাল থেকেই নিয়োজিত ছিল বলে জানান মেয়র। সম্পাদনা: মোরশেদ