ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবসে সচিবালয়ে ছিল ঢিলেঢালা পরিবেশ
আনিসুর রহমান তপন: ছয় দিন সরকারি ছুটির পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম কার্যদিবসে সচিবালয়ে ছিল ঈদের আমেজ। ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করায় কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল এদিন বেশ কম। তবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় দিনের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সরেজমিন সচিবালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কক্ষ ফাঁকা পরে আছে। যারাও উপস্থিত হয়েছেন তাদের অনেকেই নিজ আসন ছেড়ে পরিচিতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও দেখা করতে যান। আর দর্শনার্থী কম হওয়ায় সচিবালয়ের ভবনগুলোর করিডর ও লিফটগুলোর সামনে ভিড় ছিল না একেবারেই।
এদিকে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার আবার সাপ্তাহিক ছুটি। অনেকেই বৃহস্পতিবার ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করায় উপস্থিত হননি সচিবালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, উপস্থিতির হার বেশ কম। যারাও এসেছেন কাজে-কর্মে ছিল অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব। উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মূলত পারস্পরিক খোঁজ-খবর ও শুভেচ্ছা বিনিময়েই ব্যস্ত ছিলেন।
তবে সকাল থেকেই বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সচিবালয়ে এসেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। এ সময় অনেক মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিজ কক্ষে এবং সভাকক্ষে পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আবার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী নিজ নির্বাচনি এলাকায় ঈদ করার কারণে গতকাল অফিসে উপস্থিত হননি।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে সচিবালয়ে নিজ দফতরে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সবার সঙ্গে মিষ্টিমুখ করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, এবার সার্বিকভাবে উৎসবের আমেজে সবাই ঈদ পালন করেছে।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এবারের ঈদে সিকিউরিটি থ্রেট (নিরাপত্তা হুমকি) ছিল না। লম্বা ছুটি হলেও এবার সিকিউরিটি অ্যালার্টও ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আর জনগণও অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক থাকায় এবার জঙ্গি-সন্ত্রাসের মতো কোনো অঘটন ঘটেনি। এজন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হবে। তিনি বলেন, গতবার ঈদের অল্প কদিন আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ঘটেছিল এবং ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের আগে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল। এবার শুধু ঈদের আগে টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানার অগ্নিকা- ছাড়া আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন এদেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সকাল ১০টার মধ্যেই অফিসে হাজির হন। এরপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বিঘেœ সবাই ঈদ উৎসব পালন করতে পেরেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবার ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের আমরা জায়গা দিতে পারিনি। আমাদের অবকাঠামো আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় তদন্তে কারও দায়িত্বে অবহেলা বা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসায় তাৎক্ষণিক ১৫ হাজার টাকা ও বেশি আহত যারা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন