সকালে টানা বর্ষণ থাকলেও ঈদ উদযাপনে আনন্দের কমতি ছিল না
দীপক চৌধুরী: সর্বত্র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল-আজহা উদযাপিত হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীসহ দেশের সব জেলা-উপজেলায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েনের মাধ্যমে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপিত হয়।
নামাজ শেষে নিকটতম ও প্রিয় ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। প্রথম জামাতের পর পছন্দমতো পশু কুরবানি দেওয়া হয়।
সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ভবন, ঈদগাহ ময়দান, মসজিদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন স্থাপত্যে ও সড়ক-মহাসড়কে রাস্তায় ও বিশেষ ভবনগুলোতে রঙিন পতাকা ও ঈদ মোবারক লেখা পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
বৃষ্টির মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার মহানগরীর বাসিন্দারা ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। টানা বর্ষণের মাঝেই মুসল্লিরা যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এ উৎসবে রাজধানীর মুসুল্লিরা যাতে নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারেন, সে লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও মসজিদে ৪ শতাধিক ঈদ জামাত আদায়ের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে নগরীর বিভিন্ন ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায় আর সম্ভব হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে জাতীয় ঈদগাহের নামাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন হলেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অধিকাংশ জামাতই বৃষ্টির কারণে হতে না পারায় ওইসব স্থানের ঈদ জামাত মসজিদগুলোতে সরিয়ে নেয়া হয়। এতে নগরীর অধিকাংশ মসজিদে একাধিক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪ শতাধিক ঈদ জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঈদুল আজহার ২২৮টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৮০টি ঈদ জামাতের আয়োজন করেছিল।
সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিগণ, সংসদ সদস্যগণ, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণও সেখানে নামাজ আদায় করেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান জামাতে ইমামতি করেন। নামাজে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি এবং জগণের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মুসল্লিদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এ ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঈদগাহ এলাকা ঘিরে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ঈদের এ প্রধান জামাতে মহিলা ও বিদেশি কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসল্লিদের জন্য খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।
জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
প্রধান এ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন। রাজধানীর দ্বিতীয় বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল সাতটায়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে সংবর্ধনা আয়োজন করেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকারণ্য ও দর্শনার্থীর ভিড়ে ঠাসা। চিড়িয়াখানা, বলদাগার্ডেন, লালবাগ কেল্লা, শিশুপার্কে শিশুদের নিয়ে অবিভাবকদের উৎসাহমূলক অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম