শেষ পর্যন্ত বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হতে পারে মর্গেই পড়ে আছে ২০ জঙ্গির লাশ
রিকু আমির: রাজধানীর গুলশান, কল্যাণপুর, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ ও আজিমপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত ২০ জঙ্গিকে নিতে আসছে না কেউ। তাদের লাশগুলো পড়ে আছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মর্গে।
১৪ লাশ ঢামেক হাসপাতালে : সর্বশেষ আজিমপুর অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদরিসহ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে ১৪ জঙ্গির লাশ। এর মধ্যে কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত নয় জঙ্গি পড়ে আছে ৪২ দিন ধরে।
এসব লাশের বিহিত করতে পুলিশকে চিঠিও দিয়েছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। চিঠির জবাবে পুলিশ বলছে, লাশগুলোর ডিএনএ নমুনার রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে। নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, স্বজনরা লাশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। যদি শেষ পর্যন্ত তারা না নেয় তবে লাশগুলো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দিয়ে দেওয়া হবে। তারা বেওয়ারিশ হিসেবে সেগুলো দাফন করবে।
এদিকে প্রতিদিনই ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে আসছে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাতটি মৃতদেহ। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপাকে রয়েছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।
গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন স্টর্ম-২৬ অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ময়নাতদন্ত শেষে এসব জঙ্গির লাশ মর্গের মরচুয়ারিকুলারে রাখা হয়েছে। এরপর গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পৃথক একটি জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭ নামে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর আরেক অভিযানে নিহত হয় গুলশান-শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি তামিম চৌধুরী ও তার দুই সহযোগী মানিক এবং ইকবাল। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরে আরেকটি অভিযানে মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদ নামে আরেক জঙ্গি নিহত হয়। তাদের সবার লাশ রাখা হয়েছে ঢামেক মর্গে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘স্থান সংকুলান না হওয়াতে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। আর অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল খান এই বিষয়টি অবগত করে চিঠি দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। ওই চিঠিতে কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে’।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল খান বলেন, ‘আমি প্রথমে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। এই লাশগুলো হস্তান্তর হলে আমাদের অনেক জায়গা বেড়ে যাবে। জরুরি প্রয়োজনে আমরা লাশ রাখতে পারব। কিন্তু এখন সেই ব্যবস্থা নেই। আমরা পুলিশ কমিশনারকে এবং শাহবাগ থানাকেও জানিয়েছি লাশগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিসপোজ করার জন্য’।
ছয় জঙ্গির লাশ সিএমএইচে: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয় জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্তের পর কেটে গেছে দু’মাসেরও বেশি সময়। তাদের লাশ ঢাকা সিএমএইচের মর্চুয়ারিতে রাখা। এই লাশও নিতে আসেনি জঙ্গিদের পরিবারের কেউ। যদিও তাদের পরিবার ও ঠিকানা শনাক্ত করে ফেলেছে পুলিশ। তাদের লাশের বিষয়েও পুলিশের বক্তব্য ঢামেকের ১৪ লাশের অনুরূপ। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম