ট্যাম্পাকো শ্রমিকদের এবারের ঈদ বিভীষিকাময়
মবিনুর রহমান: ঈদের দিন বৃষ্টিতে ভিজছে নগরবাসী, কিন্তু আগুনে পোড়া কিছু মানুষের দহন এখনো থামেনি। তাদের সঙ্গে জ্বলছে তাদের পরিবারও।
গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণে গুরুতর আহতদের কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাদেরই একজন মীর শিপন। মুখ আগুনে ঝলসে গেছে। চার দিন ধরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। জ্ঞান না ফেরায় হতাশায় ভুগছে পরিবার। তার স্ত্রী বারবার বিলাপ করছিলেন, কারো জীবনে যেন এমন দিন না আসে। কেউ যেন এভাবে আগুনে না পোড়ে। কথাগুলো বলছিলেন আর মুখে আঁচল চেপে কাঁদছিলেন তিনি।
বার্ন ইউনিটের ৫ম তলায় রয়েছেন দিলীপ চন্দ্র দাস। তিনি মেশিন হেলপার ছিলেন বলে জানালেন স্ত্রী গীতা রানী দাস। গীতা জানান, তার স্বামীর শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গেছে। মুখে কিছুই খেতে পারছে না।
গত শনিবার টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ আছে এখনো ১০ জন শ্রমিক। তাদের সন্ধানে গতকাল বৃহস্পতিবারও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ আলম তালুকদার। আহত হয়েছে ৪০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে দুজন। ৮ জনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
মঙ্গলবার বিকালে হাসপাতালের আইসিইউর গেটের কাছে রফিকুল আলমকে কাঁদতে দেখা যায়। গুরুতর অসুস্থ তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর মৃধা। তিনি ওই কারখানায় ১৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। কিছুক্ষণ পরপর রফিকুল রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন। কান্না ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। কেঁদে কেঁদে বললেন, আজ ঈদের দিনে ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে কত যে কষ্ট লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
জাহাঙ্গীর মৃধার মতোই গুরুতর আহত মেশিন অপারেটর জাকির হোসেন। তার স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, কারখানায় বিস্ফোরণের ১০ মিনিট আগে তিনি ওই ভবনে ঢোকেন। কপাল খারাপ হলে যা হয়Ñ ঈদের আনন্দ আমাদের মাটি হয়ে গেছে।
হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শুয়ে আছেন আনোয়ার আলম। বিস্ফোরণে তার মুখম-ল ঝলসে গেছে। পাশে বসা তার ছেলে জোবায়ের। সে টঙ্গী সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ে। জোবায়ের বলেন, চার দিন হয়ে গেল বাবার জ্ঞান এখনো ফিরেনি। বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমাদের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে আসবে, জানি না। বড় খারাপ সময় যাচ্ছে।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী