সিরিয়ায় রাজনীতির কূটচালে এখনও ত্রাণ পৌঁছানো যায়নি
মুজতাহিদ ফারুকী: যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে গত সোমবার সন্ধ্যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে বিপন্ন মানুষের জন্য কোনোরকম ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে পাঠানোর জন্য তুরস্ক থেকে ত্রাণসামগ্রী বোঝাই দুটি ট্রাক বহর মঙ্গলবার তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করে এলেও রাজনৈতিক কারণে সেগুলো বুধবারও আলেপ্পোতে যেতে পারেনি। নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আটকাপড়ে আছে। অথচ যুদ্ধবিরতির প্রধান লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে আলেপ্পোতে আটকেপড়া মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী পাঠানো। সূত্র: আল-জাজিরা ও হাফিংটন পোস্ট
তুরস্ক থেকে আসা ট্রাক বহরের প্রতিটিতে রয়েছে খাদ্য ও ময়দা বোঝাই ২০টি করে ট্রাক। আলেপ্পো থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের তুর্কী শহর সিলভেগজু থেকে সেগুলো সীমান্ত পেরিয়ে এলেও সিরিয়ায় ঢুকতে পারেনি। আলেপ্পো শহরটি এখন সরকারি ও বিদ্রোহী বাহিনীর অধীন দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের দখল করা এলাকাটি অবরোধ করে রেখেছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়াবলী সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র ডেভিড সোয়ানসন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আলেপ্পোতে যাবার জন্য প্রস্তুত জাতিসংঘের ২০টি ট্রাকের বহর সীমান্তে অপেক্ষমান রয়েছে।
সোয়ানসন বলেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোর আপত্তির কারণে ট্রাকগুলো বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব আলেপ্পোতে যেতে পারছে না। কোনো কোনো পক্ষ এই ত্রাণ কার্যক্রম থেকে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছে। আমরা এটা এড়িয়ে যেতে চাই।
জাতিসংঘের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণবাহী গাড়িগুলোকে সরকারি ও বিদ্রোহী উভয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা অসংখ্য চেকপয়েন্ট পেরিয়ে যেতে হবে এবং সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না তা এখনও অনিশ্চিত।
সিরিয়ার বিরোধী পক্ষের কর্মকর্তা জর্জ সাবরা সরকারের প্রতি দোষারোপ করে বলেছেন, ত্রাণ কার্যক্রমের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য চাপাচাপির কারণে আলেপ্পোতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সিরিয়া সরকার বলেছে, সরকার এবং জাতিসংঘের যৌথ তদারকি ছাড়া তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা আলেপ্পোতে যেতে দেবে না, বিশেষ করে সেটা যদি তুরস্ক থেকে আসে। উল্লেখ্য, তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থক।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সমঝোতার আওতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় গোটা সিরিয়ায় সংঘাত আপাতত ব্যাপকভাবে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু একই ধরনের একটি যুদ্ধবিরতি গত ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধের কারণে সেখানে লাখো মানুষ নিহত এবং এক কোটি ১০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি