অপারেশন মোসাদ…
সৈয়দ রশিদ আলম
লেখক: কলামিস্ট
সারা পৃথিবীর অশান্তির মহানায়ক হিসাবে যে গোয়েন্দা সংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই গোয়েন্দা সংস্থার নাম মোসাদ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দিকে প্যালেস্টাইন থেকে প্যালেস্টাইনিদের উচ্ছেদ করা, গুপ্তহত্যার উদ্দেশ্যে মোসাদ গঠন করা হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের প্রত্যেকটা মুসলিম দেশের কাছে মোসাদ একটি অভিশাপের নাম। মিসর, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও প্যালেস্টাইনের একাধিক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাকে এই মোসাদ হত্যা করেছে। গত দুই বছর থেকে ইরানের ১২জন পরমানু বিজ্ঞানীকে মোসাদ হত্যা করেছে। মোসাদ সাধারণত একটি দেশে পর্যটক ভিসা নিয়ে প্রবেশ করে। তারপর স্থানীয় এজেন্টদের সহযোগিতায় চিহ্নিত ব্যক্তিকে হত্যা করে থাকে। এই পর্যন্ত মোসাদ যাদেরকে টার্গেট করেছে, তাদের কেউই বেঁচে থাকতে পারেননি। প্রত্যেককে মরতে হয়েছে, মোসাদের চৌকস গোয়েন্দাদের হাতে। মুসলিম বিশ্বের কোনো দেশই যেমন ইসরাইলকে বিশ্বাস করে না, তেমনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকেও বিশ্বাস করে না। একমাত্র ব্যতিক্রম তুরস্ক। তুরস্কের শাসকেরা একমুখে ইসলামের কথা বলছেন, আর একদিকে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক, গোয়েন্দা সম্পর্ক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আর এই তুরস্কই অন্য দেশে ইসলামি নেতাদের জন্য মায়াকান্না অব্যহতভাবে করে যাচ্ছে।
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একটি বড় অংশ ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করে। এই ইহুদিদের ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সহায়তা করে যাচ্ছে। রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির অপর প্রান্তটা হচ্ছে মিজোরাম। দুষ্ট মোসাদ এই মিজোরামে পৌঁছে গেছে মানবিক সহায়তা দেওয়ার নাম করে। বিবেকবান মানুষেরা জানেনÑ দুনিয়ায় যে অশান্তি চলছে, তার মূলে মূলত ইসরাইল ও তার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। যারা মোসাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইবেন, বুঝতে হবে তাদের না কোনো ধর্ম আছে, না তাদের কোনো দেশপ্রেম আছে। ভারতের একাধিক রাজনৈতিক দল ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। কারণ, এই মোসাদকে বিশ্বাস করা ও বিষাক্ত সাপকে বিশ্বাস করা একই কথা। বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের কাছে না গিয়ে যখন অভিশপ্ত মোসাদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, তখন বুঝতে হবে কাদের অন্তরে অভিশপ্ত ইসরাইলিদের জন্য প্রেম রয়েছে। ইউরোপের একাধিক দেশ থেকে মোসাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মোসাদ যখন কোনো দেশে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই দেশের ব্যক্তিত্বহীন রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়-ই তারা সফল হয়।
বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে এদেশে প্রবেশ করতে না পারে, এখন থেকেই তা নজরদারিতে আনতে হবে। প্রয়োজনবোধে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আফসোসেরও সুযোগ থাকবে না। সাবেক সি আই-এর পরিচালক উইলিয়াম ওয়েবস্টার ৯২ সালে আটলান্টায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কেজিবিকে যতটা ভয় পায়, মোসাদকে তার চেয়ে বেশি ভয় পায়। কারণ মোসাদ স্বার্থের জন্য যে কাউকে হত্যা করতে পারে। মোসাদকে নিয়ে ইরান একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। একাধিক পুস্তকও রচিত হয়েছে। মোসাদের পুরুষ ও নারী গোয়েন্দারা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেকোনো দেশে প্রবেশ করতে পারেন। এটাই মোসাদের বিশেষত্ত্ব। সম্পাদনা: আশিক রহমান