গৃহহীন আমেরিকানদের জীবনযাপন ৪
হুয়াং অবশ্য ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু তাতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি, ছবি তুলতে তো নয়ই, এমনি কি কথা বলতেও।
‘আমি ভেবে দেখলাম, হাসিই সবচেয়ে ভালো ভাষা। আর ছবি তুলতে কথা বলার দরকার হয় না,’ বললেন হুয়াং, ‘আমি আমার নিকন ক্যামেরা নিয়ে যাইনি, এটিই যা একটু অসুবিধার কারণ হয়ে উঠেছিল। কেননা লোকজনের কাছে যেতে আমার একটু দ্বিধা কাজ করছিল। তবে আমাকে তা থামিয়ে রাখতে পারেনি। কেননা সঙ্গে ছিল আমার আইফোন। পরদিন সকালে গৃহহীনদের তাবুতে গিয়ে দেখলাম, দুজন লোক কথাবার্তা বলছেন। আমি তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনে তোলা ছবি দেখিয়ে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলাম চীনে গৃহহীনদের কত ছবি তুলেছি। এরপর ইঙ্গিত করলাম, আপনাদেরও ছবি তুলতে চাই।’
কিন্তু কিংজুনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলো। তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তাও করিনি যে, আকার ইঙ্গিতে ছবি তোলার কথা শুনেই তারা চেচামেচি শুরু করে দিবেন। তাদের বলতে পারিনি যে তাদের কথা বুঝতে পারিনি। কিন্তু তাদের ভাবগতিক দেখে স্পষ্টই মনে হলো ছবি তুলতে দিতে তারা মোটেও রাজি নয়। সুতরাং আমার প্রথম উদ্যোগ ভেস্তে গেল।’
কিন্তু হতাশ হলেন না কিংজুন। আবার চেষ্টা করা শুরু করলেন তিনি পুরোদমে। কিছুক্ষণ পর দেখা পেলেন এক গৃহহীনের। তিনি তার তাবু সরাতে সহায়তা করলেন, নিজের ফ্লাস্ক থেকে কফি ঢেলে তাকে খেতে দিলেন। তার কাছ থেকে জানলেন তার নাম স্কট। তিনি ছবি তুলতে দিতেও রাজি হলেন।
এরপর স্কট সংক্ষেপে তার জীবনী তুলে ধরেন। স্কট বলেন, ‘আমি মাদক দ্রব্য খাওয়া শুরু করি ১২ বছর বয়স থেকে। এখন বয়স ৪১। আমার বাড়িঘর কিছুই নেই। নেই চাকরি। আমি মূলত হেরোইনে আসক্ত। কিন্তু এখনও মাথা যথেষ্ট ভালো, এলোমেলো নয় মোটেও। স্কুলে আমি কোনো শিক্ষা নিইনি, তাই আমাকে বলতে পারেন স্ব-শিক্ষিত। আমি বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতে পারি। আসলে একজন আঁকিয়ে হওয়ার চেষ্টা করছি আমি।’
কিংজুন বলেন, ‘এরপর আমি আমার দেশ চীনে চলে যাই। আমেরিকা ফিরে আসি ২০১৬ সালে। প্রথমেই যাই ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে শহরে। একদিন শহরে হাঁটাহাঁটি করার সময় জানতে পারি, শহরে গৃহহীনদের দুটি জায়গা রয়েছে। ঘর-সংসারের কাজ করে তারা সেখানেই। একটি নদীর তীরে এবং অপরটি রেলস্টেশনে। তবে আমি বেছে নেই। শুরু করি সহায়-সম্বলসহ আমেরিকান গৃহহীনদের ছবি তোলা। চার্লস নেলসন নামের এক গৃহহীনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি বসে সূর্যের আলো গায়ে মাখছিলেন। এগিয়ে গিয়ে আমার আগের তোলা ছবিগুলো তাকে দেখিয়ে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলাম যে সহায়-সম্বলসহ তারও ছবি তুলতে চাই।’
গ্রন্থনা: আশিক রহমান, সূত্র : ইন্টারনেট