ক্লায়েন্ট
ছয়.
Ñআমি কিন্তু পেমেন্ট নিব।
চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম। প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম। মেয়েটা কি ভেবেছে পেমেন্ট দিব না? নাকি এখনই অগ্রিম টাকা দেওয়া নিয়ম। কিন্তু মেয়েটার কথার ভিতরে অন্য কি যেন একটা ছিল। জিজ্ঞেস করলাম,
Ñপেমেন্ট দেব না এমন সন্দেহ কেন করছ?
Ñকারণ পদস্খলন হওয়া টাইপ মানুষ আপনি না। সো, আজকে হয়তো আর কিছুই ঘটবে না। আর তেমন কিছু না হলে…
মেয়েটা ইচ্ছে করেই থেমে গেল। বুঝিয়ে দিল, কেন আমি পেমেন্ট নাও দিতে পারি এমনটা ভাবছে। হয়তো আজ কিছুই হবে না, তবে পেমেন্ট ওকে আমি দিতাম। হয়তো আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেই এবার বেশ গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকাল। চোখের দুষ্টুমিটা এখন আর নেই।
Ñআমাকে কেন এনেছেন?
বেশ সরাসরি প্রশ্ন। যদিও বুঝে ফেলেছে, এভাবে এধরনের কোনো মেয়েকে লিফট দেওয়া কিংবা ওর মতো মেয়েদের এন্টারটেইন করা টাইপ মানুষ আমি না। আমি নিজেও হয়তো কিছুক্ষণ পরে বলতাম। শুধু একটু সময় চাইছিলাম। কিছু আলাপচারিতা করতে পারলে হয়তো আমার আসল উদ্দেশ্যটা বলতে সুবিধা হতো। আসলে, কি বলব, কিভাবে বলব কথাগুলো, সেটাই গুছাচ্ছিলাম। অনেকটাই তৈরি করে ফেলেছি। কিভাবে শুরু করব ভাবছি।
Ñচা টা সুন্দর হয়েছে।
Ñঅনেস্টলি স্পিকিং, আপনার টাইপ ক্লায়েন্ট খুব একটা কম পাই না।
Ñআমার টাইপ মানে?
Ñএই যে, প্রথমে বুঝতে পারে না আমি কোন টাইপের মেয়ে। যখন বুঝে তখন একটা করুণা এসে ভর করে, আজকের রাতের আয় নষ্ট করে দেওয়ার গ্লানি পেয়ে বসে। এরপরে…
Ñপেমেন্ট দিয়ে কাহিনীর ইতি টানে। এই তো?
Ñইয়েস। প্রথমে মনে হয়েছিল আপনি সেই টাইপ। কিছুক্ষণের ভিতরেই আমার আজকের রাতের উপার্জনটা পুষিয়ে দেওয়ার অফারটা দেবেন। শুধু টাকা দিলে আমি ভিক্ষা মনে করে নাও নিতে পারি ভেবে হেজিটেট করছেন ভেবে হিন্টসটা দিলাম।
Ñইউ আর অলমোস্ট দেয়ার।
Ñসো?
Ñগল্প করতে কি খারাপ লাগছে?
Ñনা। বাট ঠিক গল্প তো হচ্ছে না। অ্যাম আই রাইট?
মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার কথাগুলো শুনলাম। এরা সম্ভবত খুব ভালো সাইকোলজিস্ট হয়। মেয়েটার কথা বলায় কোথায় যেন একটা রাগ ছিল। আমার বোকামির জন্য রাগ? নাকি এভাবে টাকা নিতে রাগ? এটাও বুঝলাম, গল্প বের করতে বেশ কসরত করতে হবে। আবার নাও হতে পারে। দেখা যাবে খুব সহজেই নিজের অতীত মেলে ধরছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। অনেস্ট কনফেশান করব।
Ñশোন। তোমার নাম যেন কি?
Ñশিউলি
Ñআসল নাম?
Ñডাজ ইট ম্যাটার?
Ñএকটা কথা বলব?
Ñবলুন।
Ñতোমাকে ঠিক… আই মিন…
Ñকলগার্ল মনে হয় না, এই তো?
Ñসরি, বাট আসলেই, তোমাকে দেখতে খুব ভালো ঘরের মেয়েদের মতো দেখায়
Ñঅ্যান্ড অলসো স্মার্ট
Ñইয়া। কেন… আই মিন
Ñকেন আমি এই পথে নামিলাম, ইহা জানিতে আগ্রহ বোধ করিতেছেন, এই তো?
আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
Ñদেখুন, আপনাদের মতো দরদি ক্লায়েন্টদের জন্য আমাদের কালেকশানে কিছু কষ্টের গল্প থাকে। চাইলে সেসব থেকে একটা শোনাতে পারি। শুনবেন?
এবারও ইশারায় জানালাম, শুনব। শুরু হলো ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপের একটা গল্প। ভ- প্রেমিকের পাল্লায় পড়া এক মেয়ের গল্প। এরপরে এক পতিতালয়ে বিক্রি। অতঃপর আরও বড় এজেন্টের কাছে বিক্রি। ওর স্মার্টনেসের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। তারপরও শুনলাম।
Ñগল্পটা খারাপ না। বাট…
Ñআমার সঙ্গে মেলে না, এই তো?
Ñঠিক তা না। আসলে একটা বেশ নামকরা পত্রিকা থেকে একটা অফার পেয়েছি, একটা গল্প দেওয়ার জন্য, সো
Ñসো, এই কলগার্লকে এক রাতের জন্য গেস্ট হাউজে নিয়ে আসা?
মেয়েটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত দুটো বুকের ওপর আড়াআড়ি করে ভাজ করা। ও কি অন্যকিছু বলতে চাইছে?
প্রথমবারের মতো সব এলোমেলো হতে শুরু করল। সত্যি সত্যিই বুঝে উঠতে পারছি না, কি বলব। মেয়েটা এবার বেশ গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকাল। কাটা কাটাভাবে বলল
Ñসত্যি করে বলুন তো, কি চাই আপনার?
Ñএকটা গল্প।
মেয়েটা দুদিকে মাথা নেড়ে না সূচক ইঙ্গিত করল। অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটাকে এখন অনেক বেশি মায়াবি লাগছে। মনে হচ্ছে ওর সঙ্গে আরও সময় কাটাই। উপভোগ করি ওর সঙ্গ।
Ñশুনুন। মেয়েরা খুব ভালো সাইকোলজিস্ট হয়। আর আমাদের টাইপ মেয়েদের হতে হয় খুব ভালো থট রিডার। ক্লায়েন্টদের মনের কথা বুঝে আমাদের সেভাবে রিয়াক্ট করতে হয়। যে স্মার্টনেস আপনি আমার ভিতরে দেখছেন, সেটাই আমাদের অস্ত্র। শুধু ফ্লেশের জন্য কেউ দ্বিতীয়বার আমাদের কাছে আসে না। আসে এই স্মার্টনেসের জন্য। এই কথার ফুলঝুরি দিয়েই আমাদের ক্লায়েন্ট আটকাতে হয়। আমি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। ওর কথা বলা, ওর ভ্রুকুটি সবকিছুই কেন যেন অপূর্ব লাগছে।
Ñআপনার ব্যাপারে প্রথমে ভুল করেছিলাম, তবে এখন বোধহয় আর ভুল করছি না। প্রথমে হয়তো গল্পের লোভেই আমাকে লিফট দিতে রাজি হয়েছিলেন। বা হয়তো কেবল টাইম পাস টাইপ কিছু করতে চেয়েছিলেন। বাট আই থিংক এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অ্যাম আই রাইট?
প্রতিবাদ করতে চাইলাম, বলতে চাইলাম, ‘তুমি যা বলছ সব ভুল’, কিন্তু কেন যেন পারছি না।
আমার স্মার্টনেসের কারণেই হোক আর সৌন্দর্যের কারণেই হোক, আমার প্রতি আপনি একটু দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দুর্বলতাটাকে ঠিক অনুরক্ত বলা বোধহয় ঠিক হবে না, আপনার বর্তমান অবস্থাকে, আমাদের ভাষায় আমরা বলি ক্লায়েন্ট ইউ নো হোয়াট আই মিন। আমার ভিতর তখন ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটা কি সত্যি বলছে? সত্যিই কি আমার পদস্খলন হতে যাচ্ছে? ওর কথার প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করছে না কেন? প্রীতির চেহারাটা মনে করবার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। মেয়ে দুটোর কথা ভাবতে চেষ্টা করছি। হচ্ছে না। পারছি না। (শেষ)
সম্পাদনা : আশিক রহমান