বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
আজাদ হোসেন সুমন : বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? জনমনে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুকাল ধরে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংগঠনিকভাবে তারা এখন আর ‘শক্তিশালী’ নয়। দলটি কোনো ইস্যু কাজে লাগাতেও পারছে না। এমনকি কোনো কর্মসূচি নিয়ে দাঁড়াতেও পারছে না। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নেত্রী (খালেদা জিয়া) দেশে ফেরার পর তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামবেন।
তাদের এ অবস্থার শুরু মূলত ২০০৭ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বিএনপি নেতাদের জেল-জরিমানা হয়। পালিয়ে যান বহু ক্ষমতাধর নেতা। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন দলের মাঝারি ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। তারাও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা অব্যাহত রাখেন। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করলে সরকার কঠোরভাবে দমন করে। ফলে তারা ২০০৯ থেকে ২০০৪- এ ৫ বছর তারা মাঠে দাঁড়াতে পারেননি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচন করতে সক্ষম হয় এবং পুনরায় সরকার গঠন করে। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ‘জামায়াতের সঙ্গে’ আগুন-সন্ত্রাস শুরু করে। লাগাতার অবরোধের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালায় দলটি। এতে দলটির ভিত আরও নড়বড়ে হয়ে যায়।
এছাড়াও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার অব্যাহতভাবে জন্মদিনের কেককাটা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের মন্তব্য বিএনপিকে আরও চাপের মুখোমুখি করে দেয়।
খালেদা ও তারেকের ‘হামবড়া’ ভাব তাদের দলীয় ও ব্যক্তি ইমেজের ক্ষতি করেছে। কিন্তু ভুল শুধরানোর মানসিকতাও খালেদা ও তারেকের নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা বলেছেন, ওয়ান ম্যান শো। দলীয় স্থায়ী কমিটিতে বেশকজন জাঁদরেল নেতা আছেন, যারা নেত্রীর চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং রাজনৈতিক বোদ্ধা। তাদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপির এমন করুণ পরিণতি হতো না বলে ওই নেতা মনে করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মুঠোফোনে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, নেত্রী হজ থেকে ফিরুক। দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কমিটি হওয়ার পর নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই চাঙ্গা। নেত্রী আন্দোলনের ডাক দিলে এখন মাঠে নেতাকর্মীরা নামবে। আর তাছাড়া সরকারের জনপ্রিয়তাও অনেকটা কমে এসেছে। বিএনপি জনগণের পালস বুঝে কর্মসূচি দেবে। এতে সফলতা আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ গত সাড়ে ৭ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব ক্রাইসিস অতিক্রম করেছে, বিএনপি এর কোনো ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারেনি। বিএনপির এ দুর্বলতায় সরকার সেসব ক্রাইসিস থেকে উতরে গেছে। সর্বশেষ জঙ্গি নিয়ে সংকটে পড়ার পরও কৌশলী সরকার সেটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই বলছেন, বিএনপির যে অবস্থা, তারা এখন বিবৃতি, প্রেস রিলিজসর্বস্ব একটি রাজনৈতিক দল। শীর্ষ নেতৃত্বের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত বিএনপিকে দুর্বল, ভঙ্গুর ও পরমুখাপেক্ষী রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে। যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বিএনপির জন্য কঠিন।