অসুস্থতা নয়, মাদকাসক্তিই ভ্যানগগের আত্মহত্যার কারণ
পরাগ মাঝি : বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগ সারা জীবন রোগ-শোকে ভুগেছিলেন, এ তথ্যটি সঠিক নয়। একটি ডাচ মিউজিয়ামে ভ্যানগগকে নিয়ে গবেষণারত একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি এমন তথ্যই দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ৩০ জন গবেষক নতুন যে তথ্যটি খুঁজে পেলেন তা হলো- মৃত্যুর আগের ১৮ মাস ভ্যানগগ মাত্রাতিরিক্ত মদে আসক্ত ছিলেন।
নিউরোলজিস্ট, মনোবিজ্ঞানী এবং ওষুধ বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি আমস্টারডামে দুদিনব্যাপী এক সম্মেলনে বিশ্বখ্যাত ডাচ ইমপ্রেশনিস্ট আর্টিস্টের রোগ চিকিৎসার বিভিন্ন নথিপত্র নিয়ে আলোচনায় বসেন।
শিল্পীর বিভিন্ন চিঠি ও নথি পর্যালোচনা করে তারা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেখানে তার কথিত মৃগিরোগ, মানসিক রোগ, বাইপোলার ডিসওর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া এ রোগগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
মেডিক্যাল ইথিকসের প্রফেসর আর্কো ওডারওয়াল্ড ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা যেসব বিষয়কে সত্যিকার অর্থেই পছন্দ করিনা তা সত্যিকারেই ঘটেছিল।’ তিনি আরও বলেন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, ভ্যানগগের বিচিত্র চরিত্র ছিল, তবে তার জোরালো কোনো রোগ ছিল না।
গবেষকরা শিল্পীর জীবনকে দুভাগে বিভক্ত করেন। তার ভগ্নস্বাস্থ্যের আগের সময় এবং পরের সময়। আর এসময়ের সবচেয়ে মধ্যবর্তী সময় ধরা হয় ১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর যখন দক্ষিণ ফ্রান্সের আর্লসে তার এক বন্ধুর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে নিজের কান কেটে ফেলেছিলেন।
কান কাটার ঘটনাটির মধ্য দিয়েই তার জীবনে প্রথম ভাঙনের শুরু হয়। এরপর তিনি ১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।
ওডারওয়াল্ড বলেন, ১৮৮৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরের আগের সময়টাকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, এ সময়ের আগে তার কোনো ধরনের রোগ শোকের খুব বেশি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এর পরবর্তী সময়টা তার জীবনের বিভীষিকাময় এক অধ্যায়।
তিনি বলেন, এটা হয়েছিল মূলত তার মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন না ঘুমিয়ে থাকা, কর্মক্লান্তি, অনিয়ম; এসবের ফলে শরীরের পাশাপাশি তার মানসিক স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ে।
যদিও ওই সময় ভ্যানগগের মৃগীরোগের চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু এই একটি বিষয় তার সামগ্রিক অবস্থাকে নির্দেশ করে না বলে অভিমত পোষণ করেন ওডারওয়াল্ড।
আমস্টারডামে ভ্যানগগ মিউজিয়ামের বয়োজ্যেষ্ঠ গবেষক তেইও মিডেনড্রপ বলেন, এসব গবেষণা পত্রিকাতে প্রকাশ করা হবে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে আত্মহত্যায় ব্যবহৃত ভ্যানগগের বন্দুকটিও প্রদর্শন করা হয়। সূত্র : ডেইলি টেলিগ্রাফ। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম