টার্গেট জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ঢেলে সাজানো হবে আ. লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, ঢাকা সাজবে উৎসবে
জয়ন্ত আচার্য : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। নির্বাচনের আগে দলকে আরও গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে চান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। একারণে আগামী জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি আসছে দলের সাবেক ছাত্রলীগ এবং স্বচ্ছ ত্যাগী নেতারা।
সূত্র জানায়, আগামী সম্মেলনের মূল টার্গেট দলকে সর্বাত্মক গোছানো। বিরোধীদল মোকাবিলায় রাজপথের সাহসী নেতাদের সামনে নিয়ে আসা। জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এভাবে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। নির্ধারিত সময় কাউন্সিল হওয়ার সিদ্ধান্তে কার্যনির্বাহী কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতারা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বেড়েছে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাদের দৌঁড়ঝাপ। সম্মেলন হবে দারুণ জমকালো। আসছেন বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা।
গুলশান এবং শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার পর থমকে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের ঘোষিত কাউন্সিলের কার্যক্রম। আরও এক দফা কাউন্সিল পিছানোর আশঙ্কা করছিলেন নেতা কর্মীরা। গত ৬ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ২২ ও ২৩ আক্টোবর নির্ধারিত সময় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ৭৩ সদস্যের সাথে আরও ৮টি পদ বাড়িয়ে ৮১ করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত ন্ওেয়া হয় । জানা গেছে, সভাপতিম-লীতে ২টি, সাংগঠনিকে ৩টি পদ বাড়ছে এবং প্রশিক্ষণ সম্পাদকের পদ নতুন সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির আকারও। জাতীয় সম্মেলনের সেøাগান ‘সম্মেলনের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জঙ্গিবাদ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। তবে কিছু নেতাকর্মী এ পদে নতুন কাউকে দেখতে চান। এ পদের জন্য আলোচনায় আছেন দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহম্মদ নাসিম ও ওবায়দুল কাদের। কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাকও রয়েছেন বেশ আলোচনায় ।
বর্তমান কমিটির অতি কথা বলে যে সব নেতা দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, দলীয় কার্যক্রম পালন করেনি এবং জেলা সম্মেলনে দলীয় পদ, পৌর- ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটিতে তারা বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তবে আগামী কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদোন্নতি পাচ্ছেন বর্তমান কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ,আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দিপু মণি, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর, প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় সদস্য পদে থাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মীর্জা আজম. সিমিন হোসেন রিমি, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দি, এস এম কামাল ও আমিনুল ইসলাম আমিন ।
কার্যনির্বাহী কমিটিতে প্রেসিডিয়াম, সাংগঠনিক এবং সম্পাদকীয় পদে আসছে বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ এবং ত্যাগী স্বচ্ছ আওয়ামী লীগ নেতা। কার্যনির্বাহী প্রেসিডিয়াম পদে আসতে পারেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সাংগঠনিক সম্পাদকের গ্রুপে বড় ধরনের রদবদল হতে যাচ্ছে। বাড়ছে পদের সংখ্যাও। এ পদের জন্য নতুন করে আসতে পারে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান হুইপ ইকবালুর রহিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও তার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিম, শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।
সম্মেলনের মাধ্যমে বাড়ছে কার্যনির্বাহী সদস্য পদেরও সংখ্যা। আসছে নতুন তারুণ্যের মুখ। কয়েকজন সংসদ সদস্য । সংসদ সদস্য নাঈম রাজ্জাক, জাহিদ আহসান রাসেল, আব্দুল ওয়াদুদ দারা , ইস্রাফিল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফি আহমেদ, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, লিয়াকত সিকদার, মাহবুবুল হক শাকিল, সাইফুজ্জামান শেখর, মিহির কান্তি ঘোষাল, মনিরুজ্জামান মনির, পঙ্কজ সাহা, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, বদিউজ্জামান সোহাগ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মেহের আফরোজ চুমকি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ।
জানা গেছে এবার সম্মেলন হবে দারুণ জমকালো । সম্মেলন প্রস্তুতির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কাউন্সিলের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে থেকে রাজধানীতে সম্মেলনের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ফ্লাইওভার প্রবেশদ্বারে আলোকসজ্জা করা হবে। বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্জন ও উন্নয়নের চিত্র। এরই মধ্যে সেসব ডকুমেন্টারির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। অভ্যর্থনা উপ-কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি অতিথিদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান, যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি এবং বিশ্বের আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও ভারতের কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাকে উৎসবের নগরীতে পরিণত করা হবে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও দলের অর্জনও দেশবাসীকে জানানো হবে।
সম্মেলন প্রসঙ্গে আ্ওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আগামী দিনের আওয়ামী লীগের লক্ষ্যকে সামনে রেখে পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন এখানে যোগ্যতা-দক্ষতার মূল্যায়ন হয়। নিষ্ঠার সঙ্গে যার যার দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই পদোন্নতি হবে। আবার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে বাদ পড়তে হবে।
সভাপতি-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সব সময় নতুনরা নেতৃত্বে আসেন, বিদায় নেন পুরনোরা। আগামী নির্বাচন এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রেখে তরুণ দক্ষ ও যোগ্য নেতাদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর আগামী ২২ এবং ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন । আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর।