ভারতে কাবেরী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধ তামিলনাড়ুতে বনধ, ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি কর্নাটকের
ইমরুল শাহেদ : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার তামিলনাড়– ও কর্নাটকের রাজ্য সরকারকে বলেছে, জনস্বার্থে দেওয়া আদালতের নির্দেশের বিপরীতে সহিংসতা ও হরতাল পালনের সুযোগ দেওয়া, আদালতের নির্দেশনা গ্রাহ্য না করারই শামিল। বিচারপতি দীপক মিশ্র কর্নাটক ও তামিলনাড়–র প্যানেল আইনজীবীদের বলেছে, ‘আমরা আশা করছি কর্নাটক ও তামিলনাড়– সরকার তাদের মর্যাদা রক্ষা করবে এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। আমরা আবারও বলছি, আদালতের আদেশের পর কোনো হরতাল বা উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে না। আমাদের আদেশ পালন হতে হবে। একথা আপনাদের সরকারকে আজই জানিয়ে দিন।’
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবেরী নদীর পানির হিস্যা তামিলনাড়–কে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর কর্নাটকে সহিংসতা, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে প্রেক্ষিতে কর্নাটক সরকার পানি বণ্টনের আদেশটি পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করে। সে পিটিশন বাতিল করে দিয়ে আদালত আইজীবী প্যানেলকে বলেছে, ‘রাজ্যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে না দেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব।’
পক্ষান্তরে কর্নাটকে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এখন আছড়ে পড়েছে তামিলনাড়ুতে। সেখানে শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হয়েছে।
কয়েকটি কৃষক ও ব্যবসায়ী সংগঠন এ হরতালের ডাক দিয়েছে। তামিলনাড়–র ডিএমকেসহ বিরোধী দলগুলো এ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, বিরোধী নেতা এমকে স্টালিন, ডিএমকে নেতা কানিমোজি এবং এমডিএমকের নেতা ভাইকোকে গতকাল শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনজীবনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে না। সড়ক ও রেলপথে অবাধে যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে। এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্থানীয় বেশকিছু মুদি দোকানও বন্ধ রয়েছে। রাজ্যের পরিবহন করপোরেশন পরিচালিত বাসগুলোর পাশাপাশি ট্রেনগুলোও স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। তবে ট্যাক্সি, অটোরিকশা ও মালবাহী নৌযানগুলো চলাচল করছে না।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তামিলনাড়ুতে সশস্ত্র রিজার্ভ ফোর্সসহ কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চেন্নাইয়ে ১৫ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইকোনোমিক টাইমস ভারতের অ্যাসোসিয়েট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের সহিংসতা ও আন্দোলনে কর্নাটকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার কোটি রুপি।
দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার শহরটির একাংশে কারফিউ জারি করা হয়েছিল এবং পুরো এলাকা নিরাপত্তা বলয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছিল। তবে সেদিন বড় ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলেও মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সহিংসতা কখনো কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। গণতন্ত্রে সমাধান খুঁজতে হয় সংযম ও আলোচনার মাধ্যমে। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে নিজেদের মধ্যেই। আইন ভঙ্গ করা কখনো বিকল্প হতে পারে না। গত কদিন ধরে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চলছে তাতে কেবল দরিদ্রদেরই ক্ষতি হচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে জাতীয় সম্পদ।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভরত জনগণ ২০টি বাসে আগুন দিয়েছে এবং তামিল নাড়–তে কর্নাটকের একজন স্থানীয় বাসিন্দার হোটেলে হামলা চালানো হয়েছে। এখানে হামলাকারীদের সংখ্যা ছিল ১০ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে পুলিশ আটক করেছে। এ সময় পাঁচটি পর্যটকদের পরিবহন গাড়ি ও দুটি বাস পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
কর্নাটকের রাজ্য সরকার তামিলনাড়–র রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছে, যাতে তামিলনাড়ুতে বসবাসকারী কর্নাটকীদের জীবন সম্পদ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কাবেরী নদীর পানিকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এই দুই রাজ্যের সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তামিলনাড়–র মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সম্পাদনা: মোরশেদ