ফেরার সময় সড়ক পথে স্বস্তির সঙ্গে আছে বিড়ম্বনা, সদরঘাটে উপচেপড়া ভিড়
আনিসুর রহমান তপন: ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে আবারো বিড়ম্বনায় পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা। নদী ভাঙ্গন ও তীব্র স্রোতের কারণে বারবার ফেরিঘাট স্থানান্তরে এ বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা মোটামুটি নির্বিঘেœই ঢাকা ফিরছেন।
এদিকে ঈদ উৎসব শেষে নদী পথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় পরিণত হয় জনস্রোতে। গতকাল শনিবার এ পরিস্থিতি দেখা যায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। জানাগেছে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঢাকামুখী দক্ষিণবঙ্গের যাত্রী ও যানবাহনের চাপে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। এতে ফেরার পথে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, চারটি ঘাটের তিনটি ঘাট সচল রয়েছে। গতকাল ৪ নম্বর ফেরি ঘাটটিতে সমস্যা হলেও তাৎক্ষণিক সেটি সচল করা হয়। তবে নদীতে ভাঙন অব্যাহত থাকায় সকালে একরকম আবার বিকালে আরেকরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। ১ নম্বর ঘাটে স্রোতের পরিমাণ কম হলেও ২ ও ৩ নম্বরে একটু বেশি স্রোত রয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব শেষে বড় ধরনের যানজট ছাড়াই ফিরছেন রাজধানীতে। হানিফ পরিবহনের যাত্রী ফাহিম জানান, ঈদ শেষে শুক্রবার রাত ১২টায় ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা দিয়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে কোনো রকম জ্যাম ছাড়াই সকাল দশটায় ঢাকায় পৌঁছেন। বগুড়া থেকে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিকুর রহমান জানান, কোনো রকম জ্যাম ছাড়া শ্যামলী পরিবহনে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছেন তিনি।
হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম বলেন, রাত ১১টা ৪০ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসটি বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মাঝামাঝি চান্দাইলে কিছুক্ষণ জ্যামে থাকায় ১০ ঘণ্টায় ঢাকায় আসতে হয়েছে। তবে ঈদের আগের দিনগুলোতে সিরাজগঞ্জ থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতেই ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সে তুলনায় অনেকটা আরামেই চলে এসেছি ঢাকা। কেয়া, হিমেল ও সৈকত পরিবহনের যাত্রীরাও অল্প সময়ে ঢাকা আসতে পেরেছেন বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এদিকে গত দুদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকলেও গতকাল শনিবার ছিল সদরঘাটের ভিন্ন চেহারা। এদিন ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা লঞ্চগুলোতে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ। ফলে ভোর থেকেই সদরঘাটে ঈদ শেষে ফেরা মানুষের ঢল নামে।
নৌযানসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোববার থেকে সরকারি অফিস পুরোদমে শুরু হওয়ায় রাজধানীমুখী যাত্রীরা কিছুটা দেরিতে ফিরছেন।
লঞ্চঘাট টার্মিনাল সূত্র জানায়, ভোর ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত টার্মিনালে ১০২টি লঞ্চ ভিড়েছে। আর ঘাট থেকে ছেড়ে গেছে ১৭টি লঞ্চ।
বরিশাল থেকে আসা যাত্রী মেহজাবিন বলেন, শনিবার লঞ্চে এত ভিড় হবে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম আজ ভিড় কম হবে। কিন্তু লঞ্চে উঠেই দেখি মানুষের ব্যাপক ভিড়। তবে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও আসতে কোনো সমস্যা হয়নি।
পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করে চাঁদপুর থেকে রাজধানীতে ফিরছেন সরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল হাসান। ফিরতে কোনো ভোগান্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোগান্তি বলতে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এছাড়া লঞ্চ ঘাটে হকারদের উৎপাতও রয়েছে।
সদরঘাট নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক (বিআইডব্লিউটিএ) জয়নাল আবেদিন বলেন, গত দুদিনের তুলনায় শনিবার রাজধানীমুখী যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন