রিকশাচালককে গুলি বাদীর অনাপত্তিতে সেই যুবলীগ নেতার জামিন
মাসুদ আলম : রাজধানীর বনানীতে রিকশাচালককে গুলি চালানোর মামলার আসামি যুবলীগ নেতা ইউসুফ সরদার সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চাইলেও পায়নি পুলিশ। মামলার বাদী ওই রিকশাচালকের অনাপত্তিতে গতকাল শনিবার ঢাকার হাকিম গোলাম নবী জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পান সোহেল। এজলাসে দাঁড়িয়ে আসামির পক্ষে বাদির কথা বলায় আদালতপাড়ায় ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া জানান, মামলার বাদী রিকশাচালক কবির হোসেন আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, আসামির জামিনে তার কোনো আপত্তি নেই। পরে আদালত আসামিকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সোহেল রিকশাচালক কবিরকে গুলি করেন। কবির ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা চাওয়ায় সোহেল তাকে গুলি করেন বলে এজাহারে উল্লেখ আছে। বনানী থানার এসআই রিপন কুমার আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই করা এবং গুলি করার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য রিমান্ড চায় পুলিশ। তবে পুলিশের রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে আসামিপক্ষ জামিন চায়। শুনানি শেষে আদালত ইউসুফ সোহেলের জামিন মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান থেকে মহাখালী আমতলী মোড় পর্যন্ত ৪০ টাকায় রিকশা ভাড়া করেন বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল। গন্তব্য পৌঁছে ভাড়া না দিয়ে রিকশা থেকে নেমে চলে যাচ্ছিলেন। রিকশাচালক কবির হোসেন ভাড়া চাওয়ায় প্রথম চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারে। পরে উভয়ের মধ্যে বাকবিত-ার একপর্যায় সোহেল উত্তেজিত হয়ে ওই রিকশাচালকের পায়ে গুলি করেন। পরে ওই রাতেই বনানী থানায় গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে বলে জিডি করেন। পুলিশ জিডির বিষয়টি নাটক বুঝতে পেরে শুক্রবার পিস্তলসহ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল শনিবার তাকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রিপন কুমার। মহাখালী জলখাবারের পিছনে সোহেলের বাসা। সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী জুয়েল ও রানা হত্যামামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গা-ঢাকা দিতে ২০০২ সালে আফ্রিকায় চলে যায় সোহেল। তারপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে আসেন তিনি। বনানী থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমিদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তার বাসার চারপাশ সিসিটিভির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সিসিটিভি দেখে বাসায় বসেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তার একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। ভাতিজা জাকির, শাহআলম ও রবিন তার সহযোগী হিসাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও বনানী থানার যুবলীগের আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম দুলালের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করতো ইউসুফ।
এ বিষয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মামলার অন্য আসামি বনানী থানা যুবলীগের সদস্য শাহ আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার প্রধান আসামি সোহেল জামিনে পেয়েছে। মামলার বাদি কেনই মামলা করল আবার আদালতে অনাপত্তি দিল বুঝে আসছে না।