অর্থসংকটে পড়তে পারে কওমি মাদরাসাগুলো
হুমায়ুন আইয়ুব: কুরবানির পশুর চামড়ায় সমাজের গরিব-মিসকিনদের অধিকার। কুরবানির চামড়া সংগ্রহের অর্থে পরিচালিত হয় এ দেশের অধিকাংশ গরিব অসহায়দের জন্য প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাদরাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় কুরবানির চামড়া বড় ধরনের সহায়ক। দেশের কওমি মাদরাসাগুলো কুরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের অর্থে পরিচালিত হয়ে থাকে। এ অর্থ সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটলে মাদরাসাগুলো বাৎসরিক খরচ পরিচালনায় বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ বছর কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিকদের চামড়া সিন্ডিকেট ও মাদরাসাগুলো চামড়ার সঠিক মূল্য না পাওয়ার কারণে রাজধানীসহ দেশের সবকটি কওমি মাদরাসা বড় ধরনের অর্থসংকটে পড়তে যাচ্ছে।
এ লোকসানের কারণে মাদরাসাগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিং-এ দান খয়রাতের পরিমাণও কমে যাবে। বিনামূল্যে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাও অনেক সংকুচিত হয়ে আসবে। গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির চামড়ার উপর শকুনের থাবায় চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ছে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে থাকা মাদরাসাপড়–য়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এবার পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও চতুর্মুখী সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে দেশের চামড়ার বাজার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চামড়া কেনা ক্ষুদ্র মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগীদার হতদরিদ্র মানুষ, এতিম ও মিসকিন। প্রতিবছর চামড়ার মোট চাহিদার সিংহভাগের জোগান আসে কুরবানি ঈদে। একই সঙ্গে দেশের হতদরিদ্র মানুষ, এতিম ও মিসকিনদের সারা বছরের অর্থের জোগানও আসে কুরবানির ঈদের চামড়া থেকে প্রাপ্ত সহায়তার মাধ্যমে। বিপুলসংখ্যক মাদরাসা ছাত্র ঈদের চামড়ার টাকায় সারাবছর বিনা খরচে লেখাপড়া করে। কিন্তু চতুর্মুখী সিন্ডিকেটের কারণে এসব মাদরাসা ছাত্র, এতিম ও মিসকিনরা তাদের ন্যায্য হক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন মাদরাসাগুলোর পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর শাইখ যাকারিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান বলেন, বাহ্যিকভাবে মাদরাসাগুলো অর্থসংকটে পড়াটা স্বাভাবিক। কারণ, কুরবানির চামড়াকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ হতো মাদরাসাগুলোর। এসব অর্থ দিয়ে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডি পরিচালিত হয়। এ বছর চামড়া সিন্ডিকেট কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। তবে এটাকে আমি বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। কারণ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইখলাসের সঙ্গে মাদরাসাগুলোর পরিচালনা হলে আল্লাহ তায়ালা বিকল্প সাহায্য বের করে দিবেন। চামড়ার টাকার জন্য মাদরাসা পরিচালনায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না। আর যদিও মাদরাসাগুলো অর্থসংকটে পড়ে এ দেশের ব্যবসায়ীদের উদার মানসিকতার কারণে এ সংকট অচিরেই কেটে যাবে বলে মনে করি। আমার নিজের মাদরাসাও কুরবানির চামড়ার অর্থ ছাড়াই পরিচালিত হয়, আলহামদুল্লিাহ।
প্রতিবছর কুরবানির চামড়া বিক্রি করে বড় আকারে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে রাজধানীর মুহাম্মদপুরে অবস্থিত মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া। এ বছর সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয়েছে এ মাদরাসাটিকেও। এ বিষয়ে মাদরাসাটির প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, চামড়া সিন্ডিকেটের কারণে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো বাহ্যিকভাবে বড় ধরনের বাধাগ্রস্ত হবে। কুরবানির চামড়ার অর্থে মাদরাসাগুলোর বড় অংকের অর্থ সংগ্রহ হয়ে থাকে। সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য কমানো ব্যবসায়ীদের জন্য কল্যাণকর হবে না। তবে মাদরাসাগুলো বাধাগ্রস্ত হলেও কুদরতিভাবে এ বাধা দূর হয়ে যাবে বলেও আমরা মনে করি।
তবে ভিন্নমত দিয়েছেন রাজধানীর জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী। তিনি বলেন, চামড়া সিন্ডিকেটের কারণে মাদরাসাগুলোর উপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কওমি মাদরাসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কুদরতি সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। দুনিয়ার কোনো বাধাই কুরআনের শিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। তবে যারা সিন্ডিকেট করে গরিব-দুঃখীদের অধিকার হরণ করছে তাদের বিচার আল্লাহর দরবারে হবে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি