প্রাথমিক তদন্তের জন্য ৩০ এবং চূড়ান্ত তদন্তে বরাদ্দ ৩৬৫ দিন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: মেঘনা এভিয়েশনের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির দুজন কনসালটেন্ট। তারা ঘটনার তদন্ত করে প্রিলিমিনারি রিপোর্ট দিবেন একমাসের মধ্যে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (আইকাও)-এর নিয়ম হচ্ছে কোনো হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। এরপর আরও আনুষাঙ্গিক বিষয় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হলে বিদেশে পাঠানো ও সে সব ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর কাজ সম্পন্ন করে, সে রিপোর্ট পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে এর ভিত্তিতে অধিকতর তদন্ত করার প্রয়োজন হলে সে সব তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। ঘটনা ঘটনার ৩৬৫ দিন অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে হবে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সূত্র জানায়, আমরা ঘটনার দিনই দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। দুর্ঘটনাটি বন্ধের দিনে হলেও ঘটনার পরপর তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। এখনো কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাননি। হেলিকপ্টারের দরজা খুলে সেলফি তোলা, ভিডিও করা, ভিতরে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করা, ঝাউ গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া, পানির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে নানা কথা আমরা শুনছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও আমরা এসব কথা দেখছি। কিন্তু এর কোনো সত্যতা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। কারণ ঘটনার পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সিভিল এভিয়েশনের তদন্ত কাজে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করছেন ও তদারকি করছেন উচ্চপর্যায়ে এমন একটি সূত্র জানায়, হেলিকপ্টারটিতে কারিগরি কোনো ত্রুটি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। কারণ কারিগরি ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা হতে পারে। এছাড়াও অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। নানা দিক বিবেচনায় নিয়েই কমিটি কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। হেলিকপ্টারের পাইলট ও যাত্রীদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলবেন। সূত্র জানায়, আমাদের তদন্ত টিমে একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন হাসমী। তিনি কারিগরি দিকটি পরীক্ষা করে দেখবেন। অন্যদিকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) জাফরও ঘটনার অন্যান্য সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করবেন। তারা দুজন মিলে এখন তদন্ত করছেন। তবে প্রয়োজন হলে তদন্ত কমিটির আকার বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে মেঘনা এভিয়েশনের ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে তারা কি কি তথ্য দিয়েছিল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নথিপত্রও তদন্ত কমিটির কাছে রোববার তুলে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ঘটনার পর পর যাতে মেঘনা এভিয়েশনের তরফ থেকে ফ্লাইট পরিচলনার ব্যাপারে যোগাযোগ করার জন্য যেসব নথি দেওয়া হয়েছিল তা যাতে মিসিং না হয় কিংবা রদবদল করতে না হয় এ কারণে এ সংক্রান্ত সব নথিপত্র সিলগালা করা হয়। সেগুলো ওই অবস্থায় রোববার সকালে তদন্ত কমিটির কাছে তুলে দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পিছনে পাইলটের কোনো গাফিলতি আছে কিনা, ভুল করেছেন কিনা, যাত্রীদের কারণে ঘটনা ঘটেছে কিনা, কিংবা সিভিল এভিয়েশনের টওয়ারের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ ছিল কিনা, সিভিল এভিয়েশনের যারা ফ্লাইট পরিচালনার সঙ্গে ওই সময়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের কোনো গাফিলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। সর্বোপরি উড়োজাহাজে অন্যান্য কোনো ত্রুটি ছিল কিনা তা চিহ্নিত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে তারা ফ্লাইট পরিচালনার সময় উল্লেখ করেছিল কিনা ওই হেলিকপ্টারে সাকিব আল হাসান যাবেন, কারা কারা থাকবেন তাদের নাম , বয়স ও পরিচয় আছে কিনা, এছাড়াও ফ্লাইটটি যে সময় ফেরার জন্য উল্লেখ করেছিল সেই সময়ই টেকঅফ করেছিল, কক্সবাজার থেকে তারা ঢাকার দিকেই আসছিলেন নাকি সেখানে সমুুদ্র দেখার জন্য উপরে উঠেছিলেন এগুলোও দেখা হবে। কারণ এমনও হতে পারে ওই সময়ে তাদের হয়তো ঢাকায় ফেরার সিডিউল ছিল না। উপর থেকে সমুদ্র দেখারও চেষ্টা করতে পারে। সেলফি তোলা, ভিডিও করার বিষয়টিও আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও দেখা হবে তারা ফ্লাইট পরিচালনা করে ওই ফ্লাইট নামার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই ফিরতে ফ্লাইট পরিচালনা করবে এমন কথা আগে জানিয়েছিল কিনা। যেখান থেকে উড্ডয়ন করেছিল তা যথাযথ স্থান ছিল কিনা টেকঅফ করার জন্য। নাকি ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল।
ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে যখন যায় তখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত সিভিল এভিয়েশনের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ফেরার পথেও তাই করার কথা ছিল। এ কারণে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় ছিল না কিছুই। সূত্র জানায়, আমরা খতিয়ে দেখছি তারা যে কজন যাওয়ার কথা সে কজন ঢাকা থেকে গিয়েছেন। কারণ যে কজন যাত্রীর ডিকলারেশন থাকবে তারাই যাবেন। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ফেরার পথে তারা অতিরিক্ত যাত্রী তুলেছিলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবীর বলেন, আমরা ঘটনার তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। তদন্ত কমিটির কাছে রোববার আমরা সব নথিপত্র তুলে দেব। এখন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নানা দিক থেকে নানা কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো দায়িত্বশীল কোনো কথা হচ্ছে না। যে যার মতো করে দুর্ঘটনার কারণ বলছেন বলেই সমস্যা। কারণ মিথ্যে কিংবা ভুল তথ্য দিলে অনেক সময় তদন্ত বিঘিœত হতে পারে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের তদন্ত করার জন্য সময় দিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করে রিপোর্ট দিবেন। তখন প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে অনুমান নির্ভর কিছু না বলাই ঠিক হবে।