পারিবারিক সংকট সন্তানের অমনোযোগিতার জন্য দায়ী
জুলফিয়া ইসলাম
প্রকৃতপক্ষে সন্তানদেরকে যে শাস্তি দেওয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কোনো সুফল নেই। এতে সন্তানদের সমস্যা তো দূর হয়-ই না উপরন্তু সমস্যার আরও উদ্ভব হয়। এ ধরনের সন্তনেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসামাজিক এবং ভীতু প্রকৃতির হয়ে থাকে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে লালিত সন্তানেরা প্রতিটি কাজেই সক্রিয়, উদ্যোগী ও মিশুক হয়। পরিবারে স্নেহ-মায়া-মমতার ছায়ায় নিরাপত্তার সুদৃঢ় হয়। এদের মাঝে আরও কিছু গুণ লক্ষ্য করা যায়। যেমনÑ এরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে, মানুষের প্রতি এদের মমত্ববোধ দেখা যায়। যেকোনো ব্যাপার নিয়ে উদ্যোগ কম থাকে। সহজে উত্তেজিত হয় না। এসব সন্তান সবখানেই নিজের প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সমঝোতা বিরাজমান হয়। প্রতিটি সন্তানই স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হতে চায়। সন্তানেরা স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হলে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বচ্ছল ও দৃঢ় হতে দেখা যায়। স্বাবলম্বী সন্তানদের মাঝে প্রতিটি কাজেই আগ্রহ দেখা যায়। কাজ করতে তারা ভয় পায় না। নিজের কাজ নিজে করে ফেলে এবং সেই সঙ্গে সাহসীও হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেসব সন্তান গণতান্ত্রিক পরিবেশে মানুষ হচ্ছে, এরাই উপযুক্ত বিকাশ লাভে সক্ষম হয়। একটি সন্তানের শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদা পূরণই যথেষ্ট বলে বিবেচিত নয়। সন্তানের সঙ্গে কথা বলা, খেলা, গল্প করা, বেড়াতে যাওয়া মোট কথা তাকে সঙ্গ দেওয়া, তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
সন্তানের মনোযোগ বৃদ্ধিতে একটি পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের মধ্যে মা-বাবার শাসন এবং নিয়ম শৃঙ্খলার প্রভাব একজন সন্তানের মনোযোগকে বিঘিœত অথবা বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং, সন্তানদের শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থাটিই গ্রহণ করে তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনোযোগী করে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করুন।
পারিবারিক সঙ্কট আপনার সন্তানের অমনোযোগিতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। প্রায় সব পরিবারেই কমবেশি পারিবারিক সঙ্কট এসে উপস্থিত হয়। ফলে পারিবারিক জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়। তখন পরিবারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজমান হতে দেখা যায়। সন্তানদের উপর এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মকভাবে দেখা দেয়। যেসব পরিবারে মায়া-মমতার বন্ধন দৃঢ় থাকে, সেসব পরিবারে সঙ্কট সৃষ্টি হলে সন্তানদের উপর এর প্রভাব পড়ে না। আজকে পরিবর্তনশীল সমাজে পরিবারের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে পারিবারিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা পরবর্তীতে সমাজ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
সাধারণত দেখা যায়, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে বেকারত্বে প্রভাব বেশি পড়ে না। কারণ, তারা সব সময়ই অভাব অনটনের মধ্যে থেকে যেকোনো কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে কিন্তু উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারে যখন বেকারত্ব এসে উপস্থিত হয় তখন পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হতাশা, অনিশ্চয়তা, সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি দেখা যায়। সন্তানেরা বাবার বেকারত্বে অসহায় বোধ করে। মাকে তখন অর্থ উপার্জনের জন্য নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। ওই সময় ছোট ছেলেমেয়েদেরকে দেখাশোনার জন্য অন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর্থিক টানাটানির জন্য কিশোর-কিশোরীরা অসামাজিক, অমিশুক ও অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে থাকে।
চাকরিগত কারণে বদলি হলে কিংবা অনেক সময় বাবা যদি বিদেশে চাকরিরত থাকেন, তখন মাকে সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিতে হয়। ওই সময় বিভিন্ন কাজে মাকে ঘরের বাইরে থাকতে হয়। সেই সঙ্গে সন্তানদের পরিচালনার ভারও তাকে নিতে হয়। এতে করে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাবা যখন বিদেশ থেকে ফিরে আসেন তখন সন্তানদের নতুন করে বাবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়। এ ছাড়াও মা-বাবা কোনো একজন যদি সংসার ত্যাগ করে চলে যান তাহলেও পরিবারে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। (চলবে)
লেখক: কথাসাহ্যিতিক / সম্পাদনা: আশিক রহমান